সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
লালমনিরহাটে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলো জনতা ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, হামলায় পুলিশসহ আহত ৫ জন রংপুরের তারাগঞ্জে সাংবাদিক নাজিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা! লালমনিরহাটের আলোচিত হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার গ্রেপ্তার-১ ‎পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে এসে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষনের স্বীকার জামিয়া উসমান গণী (রা.) মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় কৃতিত্ব যশোরের চৌগাছায় ছেলের হাতে পিতা খুন ফুলবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটার চিমনি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো প্রশাসন কাজিপুরে বালু নিংড়ানো পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু 

ঢাবির বটগাছটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বন্ধুত্বের প্রতীক

রিপোর্টারের নাম : / ১৪৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলা। এ কারণে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই বটগাছ উপড়ে ফেলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

স্বাধীনতার পর (১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে এসে একই জায়গায় আরেকটি বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সিনেটর এডওয়ার্ড টেড কেনেডি নামে পরিচিত এডওয়ার্ড এম কেনেডি। সেই গাছই এখন প্রশস্ত শাখা-প্রশাখায় ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। গাছটি দেখে এডওয়ার্ড টেড কেনেডির ছেলে এডওয়ার্ড টেড কেনেডি জুনিয়র বলেছেন, গাছটির সামনে গিয়ে তিনি বাবার উপস্থিতি অনুভব করেছেন।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সপরিবার ঢাকায় আসা টেড কেনেডি জুনিয়র সোমবার সকালে বাবার রোপণ করা সেই গাছ পরিদর্শন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি নিজের অনুভূতির কথা জানান।

টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা যে বটগাছটি রোপণ করেছিলেন, সেটি পরিদর্শন করেছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপড়ে ফেলা বটগাছের স্থলে তিনি ওই গাছ রোপণ করেছিলেন। কারণ, এটি ছিল ছাত্রসমাবেশের একটি জনপ্রিয় জায়গা। এ গাছের নিচে (বাংলাদেশের) স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা আলাপ-আলোচনা হয়েছে৷ তাই আমার বাবা ভেবেছিলেন, ওই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তিনি নতুন গাছটি রোপণ করেছিলেন। এ গাছ পরিদর্শন আমার জন্য একটি আবেগের বিষয়। ওই গাছের সামনে গিয়ে আমি আমার বাবার উপস্থিতি অনুভব করেছি।’

এই বটগাছ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন টেড কেনেডি জুনিয়র। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির আন্দোলনের প্রতি সম্মানের নিদর্শন হিসেবে এটি থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী স্মরণ’ শীর্ষক এই বিশেষ বক্তৃতায় টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, স্বাধীনতাসংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ চরম অন্যায় ও বর্বরতা মোকাবিলা করেছে। তাঁর বাবা ছিলেন সেই অল্প কয়েকজন রাজনীতিবিদের একজন, যাঁরা শরণার্থী সংকটসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংঘটিত বর্বর গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে সবার সমর্থন করা উচিত।

তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী (প্রায় ৫০ বছর) সদস্যদের অন্যতম। তিনি সবার জন্য মানবিকতা ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করতেন। বাবা বিশ্বাস করতেন, টেকসই গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো। মানবিকতার এ ধারণার ওপরই তাঁর পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাবনা তৈরি হয়েছিল, হেনরি কিসিঞ্জার (১৯৭১ সালে) যা বুঝতে পারেননি।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা বাংলাদেশে কেনেডি পরিবার সব সময় গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করে বলে উল্লেখ করেন টেড কেনেডি জুনিয়র।

বক্তৃতার সময় তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য—স্ত্রী ক্যাথরিন কিকি কেনেডি, মেয়ে কেলি কেনেডি, ছেলে টেডি কেনেডি, ভাগনি গ্রেস কেনেডি অ্যালেন ও ভাগনে ম্যাক্স অ্যালেন উপস্থিত ছিলেন। কেনেডি পরিবারের এই সদস্যরা ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছেন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁরা বাংলাদেশ সফর করবেন।

টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা পিছিয়ে থাকা ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, মুক্ত গণমাধ্যম থাকলেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নিজের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে অনেক অন্যায্য সমালোচনা হলেও তিনি বিশ্বাস করতেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়। আমার বাবা ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।’

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, দুই দেশের ৫০ বছরের সম্পর্কে অনেক সাফল্য আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যনিরাপত্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সেনা সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের সংকল্পকে যুক্তরাষ্ট্র সাধুবাদ জানায়। বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে যাঁরা পালিয়ে এসেছেন। এর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে। আগামী ৫০ বছরে দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার (১৯৭১ সাল) শুরুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বহু মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিলেন। বহু মার্কিন ব্যক্তি, সংবাদপত্র, প্রতিষ্ঠান সরকারের সেই নীতির বিরোধিতায় নেমেছিলেন। সিনেটর কেনেডি নিক্সন প্রশাসনের অধীন তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেই নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন।

পিটার হাস আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রয়াত সিনেটর কেনেডিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করে থাকেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু) পাকিস্তানের জেলে থাকাকালে তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া তখন ঢাকায় থাকা অধিকাংশ মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল সরকারের সেই নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। সে কারণে তাঁদের কেউ কেউ পেশাগতভাবে সমস্যায় পড়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এ বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর