অবকাঠামো উন্নয়ন ও আয় হচ্ছে সমান গতিতে

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজ। এটি চালু হলে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে এই সমুদ্র বন্দরের টার্মিনালে কন্টেইনার পরিবহণসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এ বছরের জুনে বন্দরের প্রথম টার্মিনালসহ প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও সেটা শেষ হচ্ছে না। তবে ২০২৩ সালে বিগত বছরের থেকে ১৫ গুণ বেশি আয় করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দরের ফলক উন্মোচন করেন। আর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরের আনুষ্ঠানিক পণ্য খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। সেই থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ২৯১টি বিদেশি জাহাজ নোঙ্গর করে। যার মধ্যে ২২৬টি জাহাজে পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের কয়লা এবং ৬৫টি জাহাজে অন্যান্য পণ্য পরিবহণ করা হয়। এ বাবদ পায়রা বন্দরের আয় হয় ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৮ টাকা। আর কাস্টমস কর্তৃক আয় হয় ৬৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৭ টাকা।
এর মধ্যে ২০২২ সালে সব থেকে বেশি জাহাজ এই বন্দর ব্যবহার করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালকে পায়রা ‘বন্দরের বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন বন্দর চেয়ারম্যান। এ বছর গত বছরের থেকে ১৫ গুণ বেশি আয় করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বন্দরের জন্য প্রথম টার্মিনাল, ইয়ার্ড, ছয় লেনের সংযোগ সড়কসহ অনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। কারও যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। বন্দরের প্রকৌশলীসহ দেশি-বিদেশি কনসালট্যান্টরাও এখানে কাজ করছেন। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে।
পায়রা বন্দরের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) এস এম ওমর ফারুক জানান, সার্ভিস জেটি এবং জেটি-সংলগ্ন সড়কের কাজ ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইয়ার্ড এবং জেটির কাজ ৬৭ শতাংশ, ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও ব্রিজের কাজ ৩৫ শতাংশ এবং বানতিপাড়া বাজার থেকে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের কাজ ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে- আন্দারমানিক নদীর ওপর ছয় লেনের সেতু নির্মাণের কাজ।
পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘পায়রা বন্দরে অপারেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি নির্মাণকাজও চলছে। একটি বন্দরের নির্মাণকাজ বড় একটি বিষয়। একটি বন্দর রাতারাতি গড়ে ওঠে না, এটি গড়ে উঠতে সময় লাগে। গত সাত-আট বছরে পায়রা বন্দর অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোকতা ও দিকনির্দেশনায়। সে কারণে যারা কাজ করছেন, তারাও আগ্রহ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বন্দরে এক হাজারের অধিক শিপ হ্যান্ডেলিং করতে সক্ষম হয়েছেন, ২০২২ সালে তা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০২৩ সালকে বলি পায়রা বন্দরের বছর। আমাদের চিন্তা থেকে এ বছর এই বন্দরে রেভিনিউ ইনকাম ১০-১৫ গুণ বেশি হবে। এ বছর আমরা এই বন্দরের প্রথম টর্মিনালটি চালু করব।’
এদিকে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পায়রা বন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজও চলমান রয়েছে। বেলজিয়ামের ড্রেজিং প্রতিষ্ঠান জান ডে লুন এটি বাস্তবায়ন করছে।