মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
লালমনিরহাটে মাথা বিহীন মরদেহ উদ্ধার স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে! শ্রীপুরে চার বছরের শিশুর গায়ে সৎ বাবার গরম ছুরির ছ্যাঁকা যশোরের ঝিকরগাছায় জমি দখলকারীদের হামলায় মা-ছেলে জখম বেনাপোলে পাসপোর্টযাত্রীর জাল ভ্রমণকর সরবরাহের অভিযোগে আবারও শামিম আটক দেশব্যাপী নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বেনাপোল কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন লালমনিরহাটে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলো জনতা ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, হামলায় পুলিশসহ আহত ৫ জন রংপুরের তারাগঞ্জে সাংবাদিক নাজিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা! লালমনিরহাটের আলোচিত হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার গ্রেপ্তার-১

পানিশূন্য-তিস্তাপাড়ের জীবন-জীবিকা থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ১২৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

লালমনিরহাটের সর্বনাশা তিস্তা নদী এখন ধু-ধু বালুচর। বর্ষার ভরা যৌবনে দুই কুল উপচিয়ে দাপিয়ে চলা তিস্তা নদী ফাল্গুনে শুকিয়ে যাওয়ায় হেঁটেই পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে নৌকাই শুধু নয়, তিস্তা সড়ক, রেল সেতুও প্রহসনের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে তিস্তা নদী। এরপর লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে-গেছে এ নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙ্গণের মুখে পড়ে তিস্তা-পাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙ্গণে ও প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি, বসতভিটাসহ সব স্থাপনা।

তবে বর্ষা শেষ হতেই পানি শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা নদী। ঢেউহীন তিস্তার বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে বালুচরে এখন হেঁটেই নদী পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। ফলে ব্যারাজসহ তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসন মূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু-ধু বালুচরে। নদী পাড়ের জেলেরা জানান, এক সময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ধরা পড়তো।

সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন হাজারও জেলে পরিবার। সেই সময় তিস্তার মাছকে ঘিরে সদর উপজেলার তিস্তা বন্দরে শুঁটকির আড়ত ছিল। যেখান থেকে সারাদেশে যেত তিস্তা নদীর শুঁটকি। এখন মাছই পাওয়া যায় না। তাই শুঁটকির অভাবে তিস্তা বন্দরের আড়তেরও নেই আগের জৌলুস। যা আছে তা বাহিরের শুঁটকি। পানি শূন্য তিস্তায় মাছের আকাল পড়েছে। মাছ না থাকায় অনেক জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদেরও সংসার চলে অনাহারে-অর্ধহারে।

পানির অভাবে ঢেউহীন তিস্তার বুক এখন ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। নেই মাঝি-মাল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে তিস্তাপাড়ের জীবন-জীবিকা থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে। তিস্তার বাম তীরে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের জেলে জীতেন্দ্রনাথ জানান, আগে এ নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। মাছের শুঁটকি করেও সারা বছর বিক্রি করতাম।

এখন নিজের খাবার মাছ টুকুও নেই। আশপাশের গর্তে থাকা মাছ ধরে কোনরকম খেয়ে, না খেয়ে কাটছে দিন। অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্য কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এ পেশাতেই রয়েছি। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে তিস্তার যৌবন ফেরাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিস্তা চরাঞ্চল গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক নজির হোসেন জানান, বর্ষাকালে পানির প্রয়োজন নেই। তখন ব্যাপক হারে পানি ছেড়ে ভারত সরকার আমাদের ফসল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। আবার শুস্ক মৌসুমে যখন চাষাবাদের জন্য পানির প্রয়োজন তখন এক ফোঁটা পানিও পাই না আমরা। ন্যায্য হিস্যা পেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকত তিস্তায়। তখন মাছই শুধু না, নদীর পানি ব্যবহার করে চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ করা যেত। এখন অনেক টাকা খরচ ও প্রচুর পরিশ্রম করে কোনরকম চাষাবাদ করছি। যার উৎপাদন খরচও উঠে না। খেয়া ঘাটের মাঝি সফিকুল জানান, মূল স্রোত ধারায় হাঁটুর নিচে পানি।

যা হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যায়। বাকি পুরো তিস্তা নদী ধু ধু বালু চর। ফলে নৌকা চালানোর মত কোনো সুযোগ নেই এখন। সামান্য হাঁটু পানি সবাই হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা জানান, নদীতে মাত্র ২ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হচ্ছে। পানি কম থাকায় নিয়মানুযায়ী মূল স্রোত ধারার সব জলকপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে পানি শূন্য রয়েছে মূল নদী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর