মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণে পরিবর্তন আসছে

এই পরিবর্তনের বিষয়ে এরই মধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখানে থেকে অনুমোদন পেলেই নতুন পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব করবে বিবিএস। সংস্থাটি এরই মধ্যে নতুন পদ্ধতিতে হিসাব করার জন্য পণ্য ও সেবার একটি খসড়া তালিকাও করেছে। বিবিএসের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিবিএসের পণ্য ও সেবার তালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। দেড় যুগ আগে ইন্টারনেট ব্যবহার বাংলাদেশে তেমন একটা ছিল না। স্মার্টফোন ছিল না বললেই চলে। গত ১৬-১৭ বছরের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এসেছে। প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভিডিও কলের জন্য ইমো, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ যেন অপরিহার্য হয়ে গেছে। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। উবার-পাঠাও তো আছেই। গ্রামগঞ্জে মোটরসাইকেল, ইজি বাইকের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। ফলে যাতায়াতে বৈচিত্র্য যেমন এসেছে, খরচও বেড়েছে। অন্যদিকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। তাই এখন নতুন পণ্য ও সেবার তালিকা করে মূল্যস্ফীতির হিসাব করার কথা।
বিবিএস মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির হিসাবে আরো পরিবর্তন আনছি। এটি আমাদের নিয়মিত কাজ। আগে আমরা ৪২২টি পণ্য ও সেবা ওজন দিয়ে এই হিসাব করতাম, এখন করব ৭০০-এর বেশি পণ্য দিয়ে।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে তাঁরা নতুন হিসাবের পদ্ধতিটির একটা খসড়া প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেটি অনুমোদন হলেই নতুন পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব করবে বিবিএস।
এর আগে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। দলটি ১৫ দিন ঢাকায় অবস্থান করে বাংলাদেশের জন্য আগামীর ঋণ কর্মসূচি এবং নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে আলোচনা করে। প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বিবিএসের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারের নীতিনির্ধারক এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা করেন এবং বেশ কিছু নীতিমালা সংস্কারের কথা বলেন। এই আলোচনায় আইএমএফকে মূল্যস্ফীতি গণনায় ভিত্তিবছর পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই পরিবর্তিত হিসাবে মানুষের ভোগ ও খরচের প্রবণতা আরো বেশি স্পষ্টভাবে উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিবিএসের কর্মকর্তারা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির হিসাব করার জন্য নতুন ভিত্তিবছর অবশ্যই দরকার। কারণ আমাদের খাদ্যাভাব পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি সেবার মানেও পরিবর্তন এসেছে। তাই খাদ্যপণ্যের তালিকা ব্যাপকভাবে বদলানো উচিত। এখন যে খাদ্যতালিকা আছে, এর ৮০ শতাংশই কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার। ক্যালরির পরিবর্তে পুষ্টিমান দিয়ে খাদ্যপণ্যের তালিকা করা উচিত। এ নিয়ে সব অংশীজনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই এটি পরিবর্তনের কথা বলে আসছি। সরকার যদি এখন তা বাস্তবায়ন করে তবে তা হবে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।’