কারওয়ানবাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু
অবশেষে রাজধানীর কারওয়ানবাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। করপোরেশনের নিজস্ব আঞ্চলিক কার্যালয় স্থানান্তরের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হলো। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হলো যে কারওয়ানবাজারে ব্যবসা করার দিন শেষ। ঈদুল ফিতরের পর যে কোনো দিন কারওয়ানবাজার থেকে দোকানগুলো স্থানান্তরিত হয়ে গাবতলীর আমিনবাজারে চলে যাবে। আর কারওয়ানবাজার হবে মতিঝিলের মতো করপোরেট এলাকা।
এরই মধ্যে আমিনবাজারে পাইকারি কাঁচাবাজারের অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকার কেন্দ্রে যানজট কমানো এবং কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ওই বছরের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালী পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে করোনাকালে মহাখালী কাঁচাবাজারটি ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করায় মহাখালীতে আর পাইকারি কাঁচাবাজার হচ্ছে না। তবে আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কারওয়ানবাজার স্থানান্তর শুরু করল ডিএনসিসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয় স্থানান্তর কার্যাক্রম শুরু হয়। এ সময় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গায় যেহেতু সিটি করপোরেশনই থাকছে না, তা হলে অবশ্যই এটা অন্যদের জন্য একটা বার্তা। এখন স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হলো। ঈদের পর যে কোনো সময়ে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় ও পাশের দুটি মার্কেট স্থানান্তর করা হবে। আর কোনো নোটিশ নয়। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।’
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির ৫ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয় মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের পাশের কমিউনিটি সেন্টারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেখানে ডিএনসিসির নিজস্ব ভবনে হবে আঞ্চলিক অফিস। গতকাল কারওয়ানবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জিনিসপত্র ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
জানা গেছে, কারওয়ানবাজারে সব মার্কেটে মোট দোকান রয়েছে ১ হাজার ৯৬৯টি। এর মধ্যে ২ নম্বর ভবন মার্কেটে ৩৪০টি, কিচেন মার্কেট (২ তলা ভবন) ২৪টি, কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজার (তিনতলা ভবন) ৮১৪টি, কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজারের চতুর্দিকের মার্কেট ১২১টি, ফিশ (মাছের) মার্কেট ১৬টি, কর্মকার শেড ১২টি, ১ নম্বর ভবন মার্কেট (পারিস গার্মেন্টস) ২৮৬টি।
কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) একটি সমীক্ষা করে ২০১০ সালে প্রতিবেদন দেয়। তখনই কারওয়ানবাজার মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে মার্কেটটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ভেঙে ফেলার অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এভাবে দফায় দফায় উদ্যোগ নিলেও ব্যবসায়ীদের চাপে স্থানান্তর করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এবার সব বাধা উপেক্ষা করেই স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। এ জন্য নিজস্ব কার্যালয় স্থানান্তর করেই শুরু করল।
তবে সিটি করপোরেশনের এই কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কারওয়ানবাজার আড়তদার ও দোকানের ভাড়াটিয়ারা। ডিএনসিসি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে কথা হয় ৫০ নম্বর আড়াতদার মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হোক। এভাবে আমাদের সরে যেতে বললে পথে বসে যাব। আমাদের প্রত্যেকের লাখ লাখ টাকা বাকি রয়েছে। এখান থেকে চলে গেলে বাকি উঠাব কীভাবে? আর যেখানে দোকান স্থানান্তর করা হবে, সেখানে একমুখী রাস্তা। কীভাবে এতগুলো ট্রাক লোড-আনলোড হবে? এটি অযৌক্তিক।