রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার বেনাপোলে মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাবনায় গ্রেফতার আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিলেন স্থানীয়রা লালমনিরহাটে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি জিহান আটক! জয়পুরহাটে ওসির বদলি আদেশ ঠেকাতে মানববন্ধন কুড়িগ্রামে ২ টি অবৈধ ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো প্রশাসন  বশেমুরকৃবি’তে টিএইচই র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ম স্থান অর্জন উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত রাজশাহীতে ‘গ্রীন প্লাজা’র ষষ্ঠ প্রকল্পের উদ্বোধন কোম্পানীগঞ্জে মাঝিরটেক টি-টেন ক্রিকেট টুর্নামেন্টর ফাইনাল অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সভা অনুষ্ঠিত 

খেলাপি ঋণের সূচকে উন্নতি, সুফল মিলছে অর্থনীতিতে

রিপোর্টারের নাম : / ৪৪ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দেশের অর্থনীতির প্রধান কয়েকটি সূচকে উন্নতি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসছে ব্যাংক খাত।

গত ছয় মাস ধরে, অর্থাৎ টানা দুই প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ কমে আসার এ প্রবণতা আগামী প্রান্তিকগুলোতে অব্যাহত থাকলে, অর্থনীতিতে এর সুফল মিলবে। পাশাপাশি আগামীতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত ছয় মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর প্রান্তিকে কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমে আসার এ প্রবণতা আগামী প্রান্তিকগুলোতে অব্যাহত থাকলে তবেই অর্থনীতিতে এর সুফল মিলবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ এখন উদ্যোক্তারা ব্যবসায় মনোযোগী হবেন। তারা বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন। এতে তাদের ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা বাড়বে। যদি আগামী প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসে, তাহলেই এটাকে সাফল্য হিসেবে বলা যাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। আর ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় নেমেছে, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে ২০২৩ সাল শুরু হয়। মার্চে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বাড়ে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। পরের প্রান্তিক জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বাড়ে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগে সাফল্য এসেছে। কারণ, ঋণখেলাপি থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনে অংশ নিতে খেলাপি থেকে বাঁচতে ঋণ পরিশোধ করেছেন অনেকে। আবার প্রভাব খাটিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিত করছে কোনও কোনও গোষ্ঠী। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো।

একাধিক ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমার ঘটনা নতুন নয়। ব্যাংকগুলো কাগুজে মুনাফা দেখাতে এ সময়ে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ঋণ নিয়মিত করার পাশাপাশি নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এছাড়া মুনাফা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়মিত করেছে। কারণ, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হলে ব্যাংকের মুনাফা থেকে অধিক হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। ঋণ নিয়মিত করা হলে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটও কিছুটা কমে।

উল্লেখ্য, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা, যা ছিল এই খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় নেমেছে, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় সাড়ে ছয়গুণ বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তাও আবার প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপি হিসাবে নেই।

খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংক ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে কমেছে। আলোচ্য সময়ে পদ্মা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এ সময়ে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়েছে সিটি, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, রূপালী, ঢাকা, ডাচ্‌-বাংলা, এক্সিম, এনসিসি, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবিসি, যমুনা, মেঘনা, উত্তরা, ইউসিবি, মিডল্যান্ড, মধুমতি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।

জানা গেছে, রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি গত ডিসেম্বরে ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকায় নেমেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ডিসেম্বরে ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকায় নেমেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

এদিকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ঘাটতির বিষয় নিয়ে বেশ আগে থেকে আলোচনা হলেও এতদিন তা খুব একটা আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আস্থাহীনতাসহ বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের চরম সংকটের বিষয়টি সামনে এসেছে। ডলার সংকটের মধ্যে টাকারও সংকট থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে অনেক খারাপ অবস্থায় পড়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করা, ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল ও আদায় জোরদারসহ বিভিন্ন উপায়ে খেলাপি কমানোর একটি পথনকশা প্রকাশ করা হয়েছে। চারটি সূচকের ভিত্তিতে আগামী বছর থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ, আমানত বন্ধসহ বিভিন্ন কঠোরতা আরোপ করা হবে। একইসঙ্গে বেনামি ও ভুয়া ঋণ ঠেকানোসহ সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া তিন বছরের বদলে আগামীতে দুই বছর মন্দমানের খেলাপি থাকলে অবলোপনের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংককে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর