ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশ সাহসী কাজ করেছে
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ সাহসী কাজ করেছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক রায় ৭৫ বছরের সংগ্রামের পর আশাবাদের অনুভূতি দিয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করেই তাদের কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সংগ্রামকে এগিয়ে যাওয়ার এটিই প্রথম ধাপ। আমরা এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারি। রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমিকার জন্য তারা কৃতজ্ঞ। তবে তিনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের অভাবে কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন।
আইসিজের কার্যক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তি উপস্থাপনে বলেছে, ইসরাইল গাজায় সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।যার শুরু হয় ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর। যে ঘটনায় সহ¯্রাধিক মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হন। ওই হামলায় প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়। কিন্তু ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে ৭ অক্টোবরে ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলা ঘটত না। এই হামলার পরই বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে।
এদিকে জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে মৌখিক শুনানির সময় মামলাটি খারিজ করতে আইসিজের বিচারকদের প্রতি আবেদন করেছিল ইসরাইল। যে প্রস্তাব গত ২৬ জানুয়ারি প্রত্যাখ্যান করা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এখন বলেছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের যুগান্তকারী এই রায় গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় আশার আলো দেখাচ্ছে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যার শিকার এবং আহত হওয়া পাশাপাশি অপূরণীয় মানসিক আঘাত সহ্য করছে গাজাবাসী। তারা আরও বলেন, এই রায় ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়বিচারের জন্য কয়েক দশকের দীর্ঘ সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।আইসিজে মনে করছে, ইসরাইলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল হতে পারে।
ছয়টি অস্থায়ী ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। সেগুলো হলো গণহত্যার উস্কানি প্রতিরোধ ও শাস্তি দেওয়া, গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের কাছে সহায়তা ও পরিষেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করা এবং গাজায় সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণসহ গণহত্যা কর্মকা- রোধে ইসরাইলকে তার ক্ষমতার মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তারা বলেন, আমরা আদালতের সংক্ষিপ্ত দুই সপ্তাহের আলোচনায় প্রদর্শিত গুরুত্ব অনুভব করি। কারণ ইসরাইলি বাহিনী প্রতিদিন নারী ও শিশুসহ শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। এর ধারাবাহিকতায় গাজায় তিন মাসে ২৬ হাজার ৭৫১ জন নিহত হয়েছে। যা তাদের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের বেশি।
গত ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মুহূর্তটি সামনে আনতে ব্রিটেন প্রস্তুত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সবার আগে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল, কারণ ফিলিস্তিনের সব সমস্যা ব্রিটিশ নীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমাধান বের করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন, তবে এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল।
রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, ইসরাইল শক্তিশালী হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন ইস্যুকে উপেক্ষা করে আসছে। ইসরাইল আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু এর পাশে দাঁড়ানো দেশগুলো কারা? শক্তিশালী দেশগুলো। তিনি বলেন, এটি একটি মিথ যে সেরা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সজ্জিত ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে কেউ পরাজিত করতে পারে না, তবে হামাস এটিকে ভুল প্রমাণ করেছে।
গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কী ভাবছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, তিনি হামাস বা ফাত্তাহকে প্রতিনিধিত্ব করেন না, বরং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের অভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি ইউরোপের ঐক্যের কথাও উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে ৯ বছর অবস্থানকালে তার নিজেকে কখনো শরণার্থী মনে হয়নি। কারণ এখানকার মানুষের কাছ থেকে তিনি সব সময় উষ্ণতা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।