সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
দেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোরআনের আইন চালু করতে হবে- রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদের স্মরণে কোরআন প্রতিযোগিতা ও ইফতার দোয়া মাহফিল বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে কুড়িগ্রামে সংলাপ শিশু সুরক্ষা এবং শিশু অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির সংবেদনশীলতা সভা অনুষ্ঠিত সুন্দরগঞ্জের মজুমদারহাটে পিকআপ ভর্তি চাল জনতার হাতে আটক লালমনিরহাটে টিনের চালা কেটে দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি! কাজিপুরে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন; পুড়ে ছাই ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল অধ্যক্ষ কতৃক শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ লালমনিরহাটে দাদন ব্যবসায়ীর রাতভর নির্যাতন সকালে দিনমজুরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার! ভালুকায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে-১৭ অফিসারের পদ শূন্য! স্বাস্থ্যসেবা বেহাল অবস্থা!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট থেকেঃ / ৫৫০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

কাঙ্খিত সেবা নেই, মেডিকেল অফিসার নেই, নার্স নেই, আয়া-ওয়ার্ড বয় নেই, ঔষধ নেই, আইসিইও নেই, অক্সিজেন ভ্যান্টিলেশন নেই, পৃথক পৃথক ওয়ার্ড নেই, সরকার ঘোষিত বার্ণ ইউনিট নেই, ক্যান্সারইউনিট নেই, কিডনি ডায়ালাসিস ইউনিট নেই, ব্লাড ব্যাংক নেই, বিষ খাওয়া রোগীর ওয়াশ রুম নেই, হাসপাতালে সকল ধরণের অস্ত্রপাচার নেই, নেই আর নেই দিয়েই চলছে- ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালটি।

১০০ শয্যার হাসপাতালের ষ্টাফ-প্যাটান এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ১৭ জন মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে এখানকার স্বাস্হ্যসেবা দিন দিন ভেঙ্গে পড়েছে।

জানা গেছে, এ জেলায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষের স্বাস্হ্য সেবার জন্য একটি সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে ৫টি, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কেন্দ্র রয়েছে ১টি। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রায় ৬৭টি। জেলার স্বাস্হ্যসেবা অত্যান্ত নাজুক পরিনীতিতে রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বে-সরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে সেবার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

১৯৯৬ সালে লালমানিরহাট সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হতে আজ পর্যন্ত এখানে ১০০ শয্যার চিকিৎসক প্যাটানে কোন চিকিৎসক ও ষ্টাফ নিয়োগ হয়নি। এখনো ৫০ শয্যার কর্মকর্তা-কর্মচারি প্যাটানে চলছে হাসপাতালটি। সেই ৫০ শয্যার প্যাটানেও রয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারী সংকট। হাসপাতালে ১৭টি মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসার ছাড়াই চলছে হাসপাতাল- টির জরুরি বিভাগ।

এই হাসপাতালে কোভিট-১৯ রোগীদের জন্য পৃথক কোন ওয়ার্ড নেই। কেবিনে রেখে চিকিৎসা চলছে, মাঝে মাঝে সাধারণ রোগীর ওয়ার্ডে চলে কোভিট-১৯ চিকিৎসা। এছাড়াও হাসপাতালের পাশে স্হাপিত সরকারি নাসিং ইনষ্টিটিউট নার্সদের আবাসিক হলের রুমে ২০ শয্যার করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে অস্হায়ী হাসপাতাল ঘোষনা করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। সেখানে নতুন করে ১৩ জন চিকিৎসক যোগ দিলেও তার-মধ্যে ৪জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলী হয়ে চলে গেছে।
হাসপাতালে সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত আয়া-ওয়ার্ড বয় ও সুইপার নেই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। চিকিৎসকগণ স্থানীয় জনবল দিয়ে আয়া-ওয়ার্ড বয় ও সুইপারের কাজ করাচ্ছেন। তারা বিনা বেতনে কাজ করছে। তাই হাসপাতালটি প্রায় সময় ময়লা আর্বজনা দিয়ে ভর্তি থাকে।

হাসপাতালে আধুনিক ডিজিটাল এক্সে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট, রক্ত পরীক্ষা এখানে হয় না (সাধারণ লোক দেখানো দুই একটা পরীক্ষা হয়)। বাকি পরিক্ষা-নিরিক্ষা ক্লিনিকে করতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ১১টি থাকলেও তারা কেউ নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। তারা বিভাগীয় রংপুর শহরে বসবাস করেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন ক্লিনিক, হাসপাতালা ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। সেখানে নিয়মিত কাজ করেন। শুধুমাত্র বেতন নিতে মাসে দুই একবার হাজিরা দিতে আসতে হয়। হাসপাতালে সকল ধরণের ছোট-খাটো অস্ত্রপাচার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধই রয়েছে। দামী ওটি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সরকার ঘোষিত বার্ণ ইউনিট, ক্যান্সারইউনিট, কিডনি ডায়ালসিস ইউনিট, ব্লাড ব্যাংক, বিষ খাওয়া রোগীর ওয়াশ রুম নেই। অনেক সময় হাসপাতালের বাহিরে কলের পাড়ে প্রকাশ্য ওয়াশ করা হয়। কখনো কখনো হাসপাতালের লাশ রাখার ডিপ ফ্রিজের রুমে বিষ খাওয়া রোগীকে ওয়াশ করা হয়।

অপরদিকে একজন করোনা রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা করে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও সদর হাসপাতালে একজন রোগীকে তিন বেলা যে খাবার দেওয়া হচ্ছে তার বাজারমূল্য ৮০-১০০ টাকার বেশি নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দেওয়া কথা থাকলেও তা পাচ্ছেনা রোগীরা। ফলে অধিকাংশ রোগীকেই বাড়ির খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানান, প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য আসে। কিন্তু রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দেয়া সম্ভব নয়। এই হাসপাতালে কোন মেডিকেল অফিসার নেই। ১৭টি পদ শূণ্য প্রায় দেড় বছর থেকে। সরকারি ভাবে কোন আয়া-ওয়ার্ডবয় নিয়োগ নেই। বিনা বেতনে স্থানীয় আয়া-ওয়ার্ডবয় দিয়ে কি ধরণের সেবা দেয়া যায় উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মূলেন্দ্র রায় জানান, হাসপাতালের পাশে আড়াইশত শয্যার হাসপাতালের একটি ৮ তলা বিল্ডিং নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে গণপুর্ত বিভাগ হস্তান্তর করার কথা। সেখানে পৃথক-পৃথক সরকার ঘোষিত ইউনিট গুলো চালু করা হবে। এই মুহুর্তে হাসপাতালে চিকিৎসক, আয়া-ওয়ার্ডবয় প্রয়োজন। তা না হলে জন সাধারণের চিকিৎসা সেবা মোকাবেলায় কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর