মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ভূরুঙ্গামারীতে ৩ ইটভাটার ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা সুন্দরগঞ্জে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড! গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় আওয়ামিলীগ নেতা গ্রেফতার কুড়িগ্রামে বিএনপির ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা দীর্ঘ ৭ বছর পর বাংলাদেশি স্বামী-স্ত্রীকে ফেরত দিল ভারত লালমনিরহাটে ক্লিনিকের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ভেসে উঠলো “জয় বাংলা ছাত্রলীগ আবার ফিরবে উল্লাপাড়ায় হাত-পা বাঁধা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার কোনবাড়ীতে ইয়াবাসহ যুবক আটক জিসিসির ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন কোনাবাড়ীতে জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী পালন

শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের তিন প্রধান কারণ

রিপোর্টারের নাম : / ৩৮ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে শুক্রবার (২১ জুন) দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি বড় পরিবর্তনের কারণে ২৬ ঘণ্টার এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতে সরকার গঠনে বড় পরিবর্তন এবং ক্রমপরিবর্তনশীল আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের কাঠামো নির্ধারণ হবে বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিকরা।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং এটি থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন বাংলাদেশের।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর জোটবদ্ধভাবে বিজেপি সরকার গঠন করার কারণে স্বাভাবিকভাবে শরিক দলগুলোর ওপর কিছুটা নির্ভর করতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে। এই পরিস্থিতি ২০১৪ ও ২০১৯ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ তখন এককভাবে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের অস্বস্তিকর সম্পর্কের কারণে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কের মাত্রা এবং গভীরতা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ওপরে বর্তমানে প্রভাব ফেলে। ফলে এখানে ভারসাম্য রক্ষা করা ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, যেমন- পানি, সীমান্তে হত্যা, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলমান ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, ভারতের রাজনীতি ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি—এই তিন ক্ষেত্রেই বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তিনটি বিষয়ই বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। আমার ধারণা, তিনটি বিষয় নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা স্বাভাবিক কারণেই হতে পারে’, বলেন এই সাবেক কূটনীতিক।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন

কোভিড পরিস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে ভালো ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য চীনের কাছ থেকে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। ভারত সফরের পরই চীনে যাবেন শেখ হাসিনা এবং সেখানে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

‘বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে চীনের দাবি-দাওয়া কী হবে এবং সেটির কারণে চীনের প্রভাব বলয়ে বাংলাদেশ কতটুকু ঢুকে যেতে পারে—তা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন থাকা স্বাভাবিক’, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সামগ্রিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বলয় বৃদ্ধি, ভারতের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হবে।’

আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে—তাদের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়লে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে (ভারতের) অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের গভীরতা ও মাত্রার বিষয় নিয়ে ভারত তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে। অপরদিকে বেইজিং নিয়ে ঢাকা কী ভাবছে—সেটিও বলার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের, বলেন তিনি।

ভারতের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন

জোটবদ্ধভাবে ভারতে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার কারণে জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে তেলেগু দেশাম পার্টি এবং বিহারের নিতীশ কুমারের জনতা দলের (ইউনাইটেড) ওপর অনেকটা নির্ভর করছে ভারত সরকারের ভাগ্য। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণভাবে নিজেদের সক্ষমতা দেখানোর জন্য বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সহায়তা চাইতে পারে বিজেপি।

বাংলাদেশের আরেকজন সাবেক কূটনীতিক এ বিষয়ে বলেন, ‘২০১৪ সালে ২৮২ এবং ২০১৮ সালে ৩০৩ আসন পেয়ে এককভাবে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। এবার এককভাবে আসন সংখ্যা ২৪০-এ নেমে আসার কারণে জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন করেছে বিজেপি।’

শরিক দলগুলো এবং গোটা ভারতের কাছে স্বাভাবিকভাবে নিজেদের সবল প্রমাণ করার জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি বড় করে দেখাতে চাইবে বিজেপি বলে মনে করেন এই সাবেক কূটনীতিক।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি উভয়ই ঝানু রাজনীতিবিদ এবং তাদের সরকার পরিচালনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিবেশীকে কাছে পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের পূর্ণ সহযোগিতা চাইতে পারেন নরেন্দ্র মোদি।’

আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি

ভারতের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক সম্পর্কে অস্বস্তি রয়েছে এবং সেটি গোপন বিষয় নয়। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বড় দেশ হিসেবে ভারতের স্বাভাবিক একটি প্রভাব-বলয় আছে। কিন্তু পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ওই প্রভাব বলয়ে ভাগ বসাতে চায়, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রভাব বলয় বাড়ানোর জন্য আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে চীন এখন অনেক বেশি তৎপর। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপে বড় ধরনের সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে চীন।’

সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ডোকলাম সংঘর্ষের পর দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের। বেইজিং বা অন্য যেকোনও দেশের কারণে এই সম্পর্কে ভিন্ন কোনও প্রভাব পড়ুক, এটি ভারতের কাম্য নয়।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে এই প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ভারতও আগ্রহ দেখায় এবং তারা বাংলাদেশকে বিষয়টি জানায়।

শহীদুল হক আরও বলেন, ‘ভারত ও চীনের পাশাপাশি জাপানও এ অঞ্চলের প্রতি আগ্রহী। বাংলাদেশে কক্সবাজারের মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে যে গভীর সমুদ্রবন্দর ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা গড়ে উঠছে, সেটিতে বিনিয়োগ করছে জাপান। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং এর সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো, নেপাল এবং সেইসঙ্গে ভুটানও রয়েছে।’

প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করতে আগ্রহী ভারত এবং এ জন্য ৫০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিটও দিয়েছে তারা। এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হবে না, বরং এর যে বড় ক্যানভাস—অর্থাৎ চীন, জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, সেটির আলোকে বিবেচনা করতে হবে।’

আঞ্চলিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ওই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) সহযোগিতা ও ভূমিকা কী হবে, সেটি নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা হওয়া খুবই স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর