সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই: মঞ্জু
জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের নৌকা মার্কার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, রাষ্ট্রে নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল থাকলে বাংলাদেশ থাকবে, মানুষ থাকবে। সরকার পরিবর্তন বা নতুন সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন পদ্ধতিই হচ্ছে উত্তমপন্থা।
সে নির্বাচন সঠিক হোক বা প্রশ্নবিদ্ধ হোক না কেন সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে আমরা বাংলাদেশের সকল নির্বাচনেই অংশ নিয়েছি বলে দেশে সাংবিধানিক পদ্ধতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে।মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকালে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পঞ্চবেকি বাজারের বালুরমাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে আমরা গত ৩৮ বছরে দেশের সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নির্বাচন না হলে অসাংবিধানিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ঝুঁকি থাকে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে জনগণের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন তথা ভাগ্যের পরিবর্তন বিঘ্নিত হয়। আমারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। পাকিস্তানিরা বারবার আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জনগণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে বাধ্য হয়। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধরনের সংগ্রামের প্রয়োজন নেই বলে আমাদেরকে বিভাজনের রাজনীতি পরিত্যাগ করে ঐক্যের রাজনীতি করতে হবে। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ঐক্য। আজকে দেশ গড়াই হচ্ছে রাজনীতির মূল কাজ।
তিনি বলেন, আমরা যেকোনো দল বা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারি কিন্তু এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে একতাবদ্ধ থাকতে চাই। মনে রাখতে হবে উন্নয়ন হবেই। ৩৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) দক্ষিণাঞ্চলের একটি সমৃদ্ধ জনপদ হলেও এই উপজেলায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাঙ্খিতমাত্রায় সাধিত হয়নি। এখানকার বেশকিছু অঞ্চল রয়েছে যা এখনো পশ্চাৎপদ। শিক্ষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-কুটিরশিল্প-ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বরূপকাঠির যেমন সুনাম রয়েছে আবার খাল-নদী দ্বারা বিভক্ত এই উপজেলাটি যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চল। সঠিক নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে স্বরূপকাঠিকে একটি আধুনিক জনপদ হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। যে কাজটি আমরা ভান্ডারিয়া, কাউখালী, ইন্দুরকানীতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি যোগাযোগ ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের পশ্চাৎপদতা রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে দূর করতে বহুলাংশে সফল হয়েছি।
জেপি চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। পদ্মাসেতুসহ তার ২০ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনা কালে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তার মন্ত্রিসভায় ১০ বছর যুক্ত থাকার সুযোগসহ ১৮ বছর আমরা মন্ত্রিত্ব করেছি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আমাকে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী করে নৌকা মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের সংসদ নির্বাচন বর্জন করার কারণে যাতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় সে জন্য আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগও রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই ব্যবস্থা। কিন্তু এই সুযোগকে ব্যবহার করে কেউ কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যাদের মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া কালো টাকা মালিক, ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও রয়েছে। সুস্থ সমাজ, নতুন প্রজন্ম, দরিদ্র জনগণ ও নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সব দুর্বৃত্তদের নির্বাচনের মধ্যদিয়েই প্রতিহত করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছুকে কমিয়ে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ন্যায্য হিস্যা ও অধিকার আদায়ের জন্য সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। কিছু কিছু রাজনীতিবিদ এমনভাবে কথা বলেন যেন দেশ স্বাধীন হয়নি। নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আগামীতে দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আজকের শিক্ষার্থী তথা নতুন প্রজন্ম স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করার নেতৃত্ব দিবে। যারা ৪১ সালে রাষ্ট্রকে উন্নত দেশে পরিণত করবে। আমার দৃঢ় উপলব্ধি হচ্ছে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তখন এই স্বরূপকাঠিসহ এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমাদের চাইতে ক্ষমতাবান কেউ নেই। যারা স্বাক্ষর আমি অতীতে বিভিন্ন সময় রেখেছি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারলে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটবেই।
নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা বলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নৌকা মার্কার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সমর্থনে স্থানীয় পঞ্চবেকি বাজার সংলগ্ন বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পথসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সহিদ উল আহসান। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তফা কামাল, স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এস এম ফুয়াদ, সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. বেলায়েত হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শরীফ আহমেদ, স্বরূপকাঠি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনি দত্ত জয়, সারেংকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলফাজ উদ্দিন. বলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, বলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা মো. মেহেদী মাসুদ ও মো. মারুফ হাসান।
এ নির্বাচনী পথসভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক কাজি সাইফুদ্দিন তৈমুর, সহসভাপতি মীরা রানী চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম সিকদার, প্রচার সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মো. জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, যুবলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মো. আসাদুজ্জামান খান টুটুল, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহরিয়ার কবির অপুর্ব, স্বরূপকাঠি উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, পিরোজপুর জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক তুলি মন্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য শাহ মো. নাসির উদ্দিন, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি খন্দকার লাভলী আহমেদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান আহমেদ ইমু প্রমুখ।
এ সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সফর সঙ্গী ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপি’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহিবুল হোসেন মাহিম, জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ বৈরাগী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুর রহমান সগীর জোমাদ্দার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজভী ভূঁইয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলা ওর্য়াকাস পার্টির সভাপতি আবুল কালাম হাওলাদার, ভান্ডারিয়া জেপি নেতা জামাল উদ্দীন লিটন, ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাইদুল ইসলাম, ভান্ডারিয়া উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি হুমায়ূন কবির দুলাল প্রমুখ।