এস আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ
![](https://kolomerbatra.com/wp-content/uploads/2023/08/Screenshot_6-3-700x390.jpg)
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে সংস্থা তিনটিকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন। শুনানিতে আদালত বলেছেন, মানি লন্ডারিং গুরুতর অপরাধ। তাই এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা উচিত। অভিযোগ ঠিক না হলে তাঁরা (এস আলম) হলফনামা দিয়ে জানাবেন। আর কোনো বিভ্রান্তি থাকলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রুলে সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ ও অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, বিনিয়োগ ও অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে, তা ঠেকাতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এ অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে হবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউকে বলেছেন, এই দুই ব্যক্তির অফশোর ব্যাংকিংয়ে অনুমোদন ছিল কি না, না থেকে থাকলে তাঁরা কিভাবে এ বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর করেছেন, সে প্রতিবেদন দিতে হবে।
একই সঙ্গে ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়ে হলফনামাসহ প্রতিবেদন দিতে বলেছেন উচ্চ আদালত। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
শুনানিতে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘একসময় ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করত, আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে যেত। এখন আমরাই বিদেশে টাকা দিয়ে আসি। অনুমতি ছাড়াই এস আলম বিদেশে বিলিয়ন ডলারের সম্পদ গড়ে তুলেছেন।’ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, সংক্ষুব্ধ হলে সায়েদুল হক মোশন (রিট আকারে) নিয়ে আসতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশিদের মালিকানায় বিভিন্ন কম্পানি আছে। যেমন, সিঙ্গাপুরে তালিকাভুক্ত একটি পাওয়ার গ্রিড কম্পানি আছে। মোশন আকারে এলে দুই পক্ষকে শুনে জানা যাবে এস আলমের ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু আছে কি না।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এস আলম একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের ওপর অনেক মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে বিনিয়োগ করেছে, নাকি বিদেশের টাকা বিদেশে বিনিয়োগ করেছে, তা পরিষ্কার নয়। বিষয়টি মোশন আকারে আদালতে এলে জানা যাবে। আইনজীবী সায়েদুল হক বলেন, ‘তাঁরা জাতীয়তা বদলে ফেলেছেন। বিনিয়োগ কোটায় সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এটা আইনসম্মত নয়।’ আদালত সায়েদুল হকের কাছে জানতে চান, ‘আপনার প্রার্থনা কী।’ জবাবে তিনি বলেন, অনুসন্ধান প্রার্থনা করছি।
আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত বলেছেন, এটি (অর্থপাচার) এমন একটি বিষয়, যার জন্য এক মিনিট অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বিষয়টি এক্ষুনি খতিয়ে দেখা উচিত। আদালতের উষ্মা প্রকাশের কারণ হলো, অর্থপাচার নিয়ে এই আদালতই অনেক রায়, আদেশ দিয়েছেন। এখনো অনেক স্বতঃপ্রণোদিত রুল বিচারাধীন। তার পরও টাকা পাচার হচ্ছে। আদালত বলেছেন, এটা খুব উদ্বেগজনক।’
আদালতের আদেশ কমিশনকে জানানো হয়েছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিশন কাজ করবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আগামী ৮ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের তারিখ রাখা হয়েছে বলেও জানান খুরশীদ আলম খান।