বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আত্নহত্যা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হত্যা মামলা
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট সংবাদদাতাঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছেলের আত্নহত্যাকে হত্যাকান্ড দাবী করে ঘটনার দেড় মাস পর আদালতে মামলা করেছেন আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি। সে মামলায় জমি বিরোধের প্রতিপক্ষকে অভিযুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল আজিজ উপজেলার ধুবনী গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে।
পুলিশ স্থানীয় ও অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ধুবনী গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে দুলু মিয়া (১৯)। তার বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে প্রেম পরিনয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিল। উভয় পরিবার রাজি না থাকায় বিয়ে হয়নি। এ ঘটনার জের ধরে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি (প্রেমিকার) গিয়ে বিষ পান করেন দুলু মিয়া। পরিবারের লোকজন আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ৯ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রেমিক দুলু।
ওই সময় হাতীবান্ধা থানায় দায়েরকৃর্ত এক অভিযোগে আজিজ দাবী করেন তার ছেলে দুলু মিয়া বিষ পানে আত্নহত্যা করেছেন। কিন্তু ঘটনার দেড় মাস পর আব্দুল আজিজ আদালতে মামলা করে দাবী করেন তার ছেলে দুলু মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেই মামলায় বাড়ির মালিক তার ছেলের শ্বশুরকে আসামী না করলেও আসামী করেছেন তার সাথে জমি নিয়ে বিরোধ এমন ৫ জনকে। এমনকি এ মামলার সাক্ষীও জানেন না কোন কিছু।
আব্দুল আজিজের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে পাশ্ববর্তী ডিমলা উপজেলার ছাতুনামা এলাকার লালু মিয়ার ছেলে সোনাউল্ল্যার। ওই ঘটনার জের ধরে ছেলের আত্নহত্যাকে হত্যা দাবী করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল আজিজ। সেই মামলায় আসামী করা হয় সোনাউল্ল্যা, তার ভাই ও ছেলেসহ ৫ জনকে। অথচ আজিজের ছেলে মৃত দুলু মিয়া যে বাড়িতে গিয়ে আত্নহত্যা করেন এজাহারের সেই বাড়ির মালিক আসাদ আলীর নামও নেই।
হত্যা মামলার সাক্ষী সিরাজ মিয়া, আব্দুর খালেক ও হযরত আলীর সাথে কথা হলে তারা জানান, দুলু মিয়া তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বিষ পান করেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমরা হাতীবান্ধা হাসপাতালে পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিন পরে মারা যায় দুলু মিয়া। তারা দাবী করেন, ওই ঘটনার সাথে সোনাউল্ল্যাসহ তার পরিবারের যে ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং হত্যাকান্ডের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
এ নিয়ে একাধিক বার আব্দুল আজিজের বাড়ি গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী সাহেরা বেগম বলেন, সোনাউল্ল্যার সাথে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। ওই ঝামেলা মিটে গেলে ওই মামলাও মিমাংশা হবে।
হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত ককর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ওই সময় আব্দুর আজিজ নিজেই দাবী করেছেন তার ছেলে বিষ পানে আত্নহত্যা করেছেন। ঘটনার দেড় মাস পর কি কারণে আদালতে হত্যা মামলা করলেন সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন। আজিজের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ এমন ব্যক্তিকেও মামলায় আসামী করা হয়েছে। আদালত যে নির্দেশ দিবে সেই নির্দেশের আলোকে পুলিশ আইনী ব্যবস্থা নিবে।