রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে

রিপোর্টারের নাম : / ২৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

দেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁদের সব সময় সবার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া উচিত, যাতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁরা গর্ববোধ করতে পারেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। তাঁদের সম্মানটা সর্বোচ্চ থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) হলে ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৪’-এর নির্বাচিত ফেলোদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করা জাতি। তাই বিশ্বদরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করেই চলব। সেভাবেই আমাদের গড়ে উঠতে হবে।’

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের কথাটা মাথায় রাখতে হবে।

জাতির পিতা যে আহ্বান করেছিলেন, ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরিবার-সংসার সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যাঁর যা কিছু আছে তাই নিয়ে। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করে শত্রুকে পরাজিত করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন। কাজেই তাঁদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে।

তাঁদের সম্মানটা সর্বোচ্চ থাকবে।’ তিনি বলেন, একটা সময় এই মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ছিল এবং তিনি সরকারে আসার পর থেকেই তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।

দলমত-নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধারা যেন সম্মানিত হন সে কথার উল্লেখ করে শেখ  হাসিনা বলেন, ‘গর্ব করে যেন তাঁরা বলতে পারেন—আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমার মতামতের সঙ্গে নাও থাকতে পারে, আমার দলে নাও থাকতে পারে, কিন্তু তার পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা। কাজেই আমার কাছে সবাই সম্মানিত। আর সেই সম্মানটা যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষ তাঁদের দেবে, সেটাই আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ অর্জনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতে এটি যেন কেউ বন্ধ করতে না পারে সে জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে এর জন্য স্থায়ী বন্দোবস্ত করারও ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানে। কেননা ১৯৯৬-পরবর্তী তাঁর সরকারের দেওয়া ফেলোশিপ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দিলে বিদেশে তাঁদের অনেক দুরবস্থায় পড়তে হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যায়ে ৩৯ জন ও পিএইচডি পর্যায়ে ১১ জনকে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৭ জন মাস্টার্স ডিগ্রি ও ১১ জন পিএইডি ফেলোকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করেন।

এ পর্যন্ত বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০৮ জন মাস্টার্স ফেলো এবং ১১৬ জন পিএইচডি ফেলোকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫ জন মাস্টার্স ফেলো ও ২৬ জন পিএইচডি ফেলো তাঁদের ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ স্বাগত বক্তব্য দেন। ফেলোশিপ লাভকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীও অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।

সরকারপ্রধান নির্বাচিত ফেলোশিপ অর্জনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, এই টাকাটা আমাদের জনগণের টাকা। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই টাকা উপার্জন করে আপনাদের উচ্চশিক্ষা দিচ্ছেন। কাজেই সেই জনগণ যেন সেই সেবাটা পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। কাজেই সে কথা মাথা রেখেই আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষ, কেউ অবহেলিত থাকবে না। এখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে, প্রতিবন্ধীরা আছে, তাদের সবার প্রতিই আমরা যথেষ্ট সহানুভূতিশীল, তারা যেন সমাজের সব রকম সুযোগ-সুবিধাটা পায়। শিক্ষাদীক্ষায় তারাও যেন পিছিয়ে না পড়ে। সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবচেয়ে আনন্দিত আমাদের একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হার্ভার্ডে যাচ্ছেন, আমাদের পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর শেফিল্ডে যাচ্ছেন, কেউ অক্সফোর্ডে যাচ্ছেন। এ রকম বিশ্বের বহু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে তাঁরা লেখাপড়া ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনাদের এই শিক্ষা আমাদের বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। কারণ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, এটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।’

তাঁর একটানা সরকার পরিচালনার সুযোগ লাভে দেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই দেশকে যতটুকু এগোতে পেরেছি, আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমি চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই মর্যাদা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য শিক্ষাদীক্ষা যা যা প্রয়োজন আমি যতক্ষণ সরকারে আছি সে ব্যবস্থা করে যাব। ভবিষ্যতের জন্যও করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তাঁর কার্যালয়ে নির্বাচিত একজনের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর