শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোনবাড়ীতে ইয়াবাসহ আটক-১ আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণায় নিঃস্ব সোহেলের পরিবার, থানায় অভিযোগ আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণায় নিঃস্ব সোহেলের পরিবার, থানায় অভিযোগ টঙ্গীতে বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার কোনাবাড়িতে ঝুট গোডাউনে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন আব্দুল আলীমের মরদেহ দীর্ঘ আড়াই বছর পর ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন অতীতে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার নাম করে হাহাকার দিয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় জাকের পার্টির নেতা রবিউল ইসলাম রবি ভাঙ্গুড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত

যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুরঃ / ১৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগকে উসকে দিয়ে রাস্তায় নামায়। তারা বলে শ্রমিকেরা ঘরে বসে বেনিফিট পাবে। কিছু কিছু মালিক আছেন তারা চায় শ্রমিকদের ঘাম নয়, পারলে তাদের রক্ত চুষে নিতে চায়, এটা অন্যায়। শিল্প যারা বাঁচাবে আপনি তাদেরকে বাঁচতে দিন। আপনি তাদেরকে সম্মান করবেন, তারা সমস্ত শক্তি উজাড় করে আপনাকে সব কিছু বিলিয়ে যাবে। শিল্পের উন্নতি হবে, তাদেরও উন্নতি হবে। আমরা ঐরকম বৈষম্যহীন একটা সমাজ চাই। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যেই সমাজে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর চারটি অধিকার (খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য এবং সুশিক্ষা) সরকার তাকে দিতে বাধ্য থাকবে।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টায় গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে শহরের রাজবাড়ী মাঠে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মতলববাজরা মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে রাখে। উদ্যেক্তা এবং মালিক যদি না থাকে শ্রমিকেরা কোথায় কাজ করবে। শিল্প যদি না বাঁচে কর্মসংস্থান কোথায় হবে। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা তার জায়গায় বসে ব্যবসা করুক, কোন দুর্বৃত্তের সাহস হবে না তার কাছে চাঁদা চাওয়ার। বাজারে স্বস্তি থাকবে, সহনীয় দ্রব্যমূল্য থাকবে, যাতে প্রতিটি মানুষ তার সামর্থ অনুযায়ী স্বস্তির সাথে বসবাস করতে পারে। সামজিক নিরাপত্তা এমন হবে, সে ঘরের মধ্যে দরজা খোলা বা বন্ধ হোক রাতের বেলা শান্তিতে ঘুমাবে, কোন দুর্বৃত্ত তার সম্পদ বা ইজ্জত লুটে নেওয়ার সাহস করবে না। আমরা এমন একটা সমাজ চাই।

তিনি বলেন, এই দেশ দফায় দফায় সাগর সাগর রক্তের বিনিময়ে বারবার মুক্তির জন্য আহাজারি করেছে ৪৭, ৭১ আবার ২০২৪ সালে। কোনো জাতি তাদের নিজেদের মুখ্য স্বাধীন অধিকারের জন্য এত রক্ত দিয়েছে কি’না আমি জানি না। সমানতালে যুদ্ধ করেছে নারী পুরুষ এবং দেড় মাসের শিশুরাও। ২৪ তারিখ যে নূতন স্বাধীনতা বাংলাদেশের মানুষ লাভ করেছে তার মাত্র দুইদিন আগে এক মা তার দেড় মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় চলে এসেছেন। পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন। সাংবাদিকেরা বলেছিল মা তুমি সরে যাও। তোমার এই কচি বাচ্চা নিয়ে তুমি এখানে থেকো না। সে বলেছে আমার তো বড় বাচ্চা নাই। আমার পরিবারের কি কেউ শহীদ হবে না? আমি এই বাচ্চা নিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য এখানে এসেছি। আমি আমার এবং আমার বাচ্চার শাহাদাতের বিনময়ে জাতি মুক্ত হয়েছে, স্বাধীন হয়েছে আমি দেখতে চাই। যে জাতির মনে এ ধরনের মায়া সৃষ্টি করেছেন আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা সেই জাতির মায়েদের পেট থেকে সন্তান সৃষ্টি না করে যেন যুদ্ধা সৃষ্টি করে দেয়।

তিনি বলেন, গত, আগত এবং অনাগত দেখে যেন আমাদের শিক্ষা হয়। যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগনের অর্থে কিনা অস্ত্র এবং বুলেট জনগনের বুকে ধরার দু:সাহস করবে এমন কেনো সন্ত্রাসী আর দেখতে চাই না। পুরো বাংলাদেশকে এক করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে এক করতে হবে। বিশ^কে জানান দিতে হবে দেশ এবং জাতির স্বার্থে আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। যত বিভাজন রেখে তৈরি করা হয়েছিল সবগুলোকে আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি। আর আমরা কাউকে এই জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ করে দিব না। দলের, ধর্মের ও গোষ্ঠির ভিত্তিতে আমরা জাতিকে আর ভাগ করার সুযোগ দিব না। জাতিকে তারাই ভাগ করে, যারা জাতির দুশমন। যারা জাতির বন্ধু, তারা জাতিকে কখনো ভাগ এবং বিভক্ত করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন।

তিনি আরোবলেন, আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে জানিয়ে দিব, তোমরা অতীতে যা করেছো এ জাতি আর তোমাদেরকে তা করতে দেবে না। আমরা জানিয়ে দিব এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলবে। আমরা চাই এমন একটা দেশ হবে, যেই দেশে বৈষম্য থাকবে না।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্য বলেন, আমাদের এমন একটা সমাজ প্রয়োজন যে সমাজে শিক্ষিত মানুষগুলো কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা জাতির কাছ থেকে লুটপাট করবে না। আমরা কোনো শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদকে আদালতের বিচারক হতে দেখতে চাই না। কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে দেখতে চাই না। একজন সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রের সেবক, তিনি দল গোষ্ঠি বা ব্যাক্তির সেবক না। আমরা এমন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামীতে দেখতে চাই না যাদেরকে বাধ্য করা হবে রাষ্ট্র, জনগন বাদ দিয়ে গোষ্ঠির পূজা করার জন্য। এমন একটা দেশ আমাদের সকলের কামনা। সেই দেশটা আমাদেরকেই গড়তে হবে, ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতে ইসলামীকে ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন করা হয়েছে। ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। জুলুম করে বিচারিক হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। সর্বশেষ দু:খজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, আমরা দেখতে চাই এই জগতে সেই হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী, মাস্টারমাইন্ড, হত্যা বাস্তবায়নকারী, আদালতে বসে যারা দুষ্ট রায় দিয়েছেন, মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন, তদন্ত করতে গিয়ে যারা নাটক সাজিয়েছেন এদের কেউ যেন সেই অপরাধ থেকে রেহাই না পায়। তারা গোটা জাতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস দেশ প্রেমিক অফিসারদেরকে ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। নিরীহ মানুষ যারা জেলে বন্দি আছে তাদের সবার মুক্তি চাই। আমরা বলেছিম প্রতিশোধ নিব না, আইন হাতে তুলে নিব না। আমাদের সহকর্মীরা চরম ধৈর্য ধারণ করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে আলেম ওলামাদের সাথে কি আচরণটা করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে চতুর্দিকে আলো নিভিয়ে তারা ব্রাশ ফায়ার করে কতজনকে যে হত্যা করেছে আল্লাহ ভালো জানে। তাদের লাশটিও পাওয়া যায়নি। দুষ্ট সরকারের ব্রশ কয়েক মন্ত্রী ২৪ এর পতনের মাত্র চারিদন আগে বললো বাড়াবাড়ি করবেন না, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ভুলে যাবেন না। রাত ১২ টার পর আমরা সব কয়টাকে সাফ করে দিয়েছি।

শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা শহীদ হয়েছে তারা চাকরি পাওয়ার জন্য বা কারো সহযোগীতার জন্য লড়াই করে নাই। তারা আমাদের অহংকার, মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তারা নি:স্বার্থ লড়াই করেছে জাতিকে সম্মানীত করার জন্য। জাতির দায়িত্ব এখন তাদের পরিবারকে সম্মাণীত করা। এটা করতে হবে, এর বিকল্প নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাবো তাদের সঠিক স্বীকৃতিটা যেন দেওয়া হয়। প্রতিটা শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন সরকার সম্মানজনক চাকরির ব্যবস্থা করে। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তাদেরকেও যেন সম্মানজনক চাকরি দেওয়া হয়। তারা যেন আজীবন কারো করুনার পাত্র হয়ে না থাকে।

গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক অধ্যাপক মুহা. জামাল উদদীনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিমের সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাৃম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাউদ্দিন আইউবী প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর