বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
বিডি২৪লাইভের বর্ষসেরা জেলা প্রতিনিধি হলেন সিরাজগঞ্জের সোহেল রানা গাজীপুরে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ,গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ কুড়িগ্রামে কমিউনিটি নেতা ও যুব ফোরাম এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সাথে ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত কোনাবাড়ীতে ঝুট গোডাউনে লাগা আগুন দেড় ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে কোনাবাড়িতে প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণ কোনাবাড়ীতে ঝুট গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৩ ইউনিট নাগেশ্বরীতে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত গাজীপুরে কারখানা খোলার দাবিতে গণ সমাবেশ শুরু  ভূরুঙ্গামারীতে ৩ ইটভাটার ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা সুন্দরগঞ্জে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড!

সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পানি উন্নয়ন বোডের সুফল থেকে বঞ্চিত তিস্তাপাড়ের মানুষ!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট : / ২৩২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটে প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে বরাদ্দ দিলেও কাজ শুরু করেন বর্ষাকালে। যা সামান্যতে পানির স্রোতে ভেঙে হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে পানি উন্নয়ন বোডের সুফল পাচ্ছে না তিস্তাপাড়ের বানভাসি মানুষ। বর্ষার অথৈ পানিতে জরুরি কাজের নামে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া সরকারি অর্থ কোনো কাজে আসছে না নদী পাড়ের মানুষের। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে বরাদ্দ দিলেও তা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হচ্ছে। সেই সাথে গত বছর সংস্কার করা বাঁধ চলতি বছর বন্যার আগেই ধসে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে ভূমি অফিসসহ তিস্তাপাড়ের হাজারও বসতবাড়ি। জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা নদীর পানি। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে যায়।

দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শীতের আগেই বাংলাদেশের অংশে মরু ভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্ট হয়। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ ৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নদী ভাঙনও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে চর জেগে ওঠে। আর বর্ষায় লোকালয় ভেঙে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়। ফলে বসতভিটা ও স্থাপনাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষজন। কতিপয় অসাধু সরকারী কর্মকর্তার কারণে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। একটি বিশ্বসাস্হ্য সূত্র জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাট প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে বরাদ্দ দিলেও কাজ শুরু করেন বর্ষাকালে। যা সামান্যতে পানির স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। গত বছর বন্যার সময় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ গ্রামে নির্মিত বাঁধ সংস্কার করতে জিও ব্যাগ (বালি ভতি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিং করে পাউবো। যা গত বন্যা পরবর্তীকালে কাজটি সমাপ্ত করা হয়। চলতি বছর বন্যা আসার আগেই গত ৬মে মধ্যরাতে ৩০ মিটার বাঁধ ধসে যায়। পরে স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকম রক্ষা করে।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর বন্যার শেষ দিকে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত করলেও তাড়াহুড়ো করে মাত্র চার হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে। বাকিসব জিও ব্যাগ তিস্তার চরাঞ্চলেই বালুচাপা পড়ে রয়েছে। রাতে আঁধারে জরুরি কাজের অজুহাতে নামমাত্র কাজ করে চলে যায় পাউবো। ফলে এ বছর বন্যা না আসতেই বাঁধটি প্রায় ৩০-৪০ মিটার এলাকা ধসে যায়। নিজেদের বসতভিটা রক্ষায় রাতেই স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে কিছুটা রক্ষা করেছেন। এটি ভেঙে গেলে খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), উচ্চ বিদ্যালয় ও খুনিয়াগাছ বাজার তিস্তায় বিলীন হবে। এসব স্থাপনা নদী তীর থেকে মাত্র দেড় ২০০ গজ দূরে। অপরদিকে আরও একটি সুত্র জানান, চলতি বছরের সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গোকুন্ডা কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে তিস্তা ভাঙ্গন রোধে বরাদ্দ নিয়ে তেমন কোন কাজ করেননি। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার অনেক স্থাপনা। উক্ত বরাদ্দ পুরোটাই লোপাটের চেষ্ঠা করায় স্থানীয়দের চাপে নির্বাহী প্রকৌশলী মুখ খুলেছেন। তিনি বলছেন, উক্ত বরাদ্দ দিয়ে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হয়েছে। বাঁধটির পাশে বসবাস করা আব্দুর রউফ (৭০) বলেন, গত ০৬ মে মধ্য রাতে হঠাৎ বাঁধটি ধসে যায়। পরে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় কিছু বালুর বস্তা ফেলে আমার বাড়িটি আপাত রক্ষা করেছি।

খবর দিলে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী এসে দেখে গেছেন। জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কার করার কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি নেই। শুষ্ক মৌসুমে কাজ না করে বন্যার সময় বরাদ্দ নিয়ে তারাহুড়া করে নাম মাত্র কাজ করে যাবে। যা আবারও ধসে যাবে। ধসে যাওয়া স্থানে ৫-৬ মাস আগে কাজ করেছে। যা আবার বন্যা না আসতেই ধসে গেছে।

একই এলাকার আব্দুর রহিম বলেন, বাঁধ থেকে মাত্র দেড়-২শ’ গজ দূরে সরকারি অফিস, স্কুল ও হাট-বাজার। নদীর পানি আর একটু বাড়লে ধসে যাওয়া স্থান দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তখন সরকারি ভবন, স্কুল আর হাট-বাজারসহ হাজার হাজার বসতভিটা বিলিন হবে। তাই দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা দরকার। এসও এসে বলে জিও ব্যাগ প্রস্তুত আছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশ ছাড়া জিও ব্যাগ ফেলা যাবে না। সেই প্রকৌশলী আবার ফোন ধরে না। সবকিছু বিলিন হলে বাঁধ দিয়ে কী লাভ? শুষ্ক মৌসুমে কাজ না করে বন্যার সময় বস্তা ফেলেই বা কী লাভ? প্রশ্ন তুলেন তিনি। এসব ছোট ছোট বাঁধ না দিয়ে তিস্তা নদী ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষায় ভিন্ন দাবি তুলেন ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ।

তিনি বলেন, রাস্তা না পেলে পানিতো নদীর পাড় ভেঙে প্রবাহিত হবেই। তিস্তা নদীতো কখনই খনন করা হয়নি। লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সংস্কার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বাঁধটির ধসে যাওয়া স্থান পরিদর্শন করে পুনরায় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আসন্ন বন্যার আগেই সংস্কার করা হবে। গত বন্যা পরবর্তীকালে সংস্কারের পর এ বছর বন্যার আগেই ধসে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর কাজ এমনই। পানির স্রোতে বিলিন হতে পারে। মাটির নিচেও ধসে যেতে পারে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর