‘হামরা কী খালি লবন ভাত খেয়া থাকমু?
রিকশাচালক রশিদ মিয়া সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজারে দাঁড়িয়ে কী যেন হিসাব মেলাচ্ছেন। মাঝে মাঝে নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলছেন। বাজারের ফর্দ হাতে নিয়ে বার বার পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা টাকা গুনছেন। জিজ্ঞেস করতে রশিদ মিয়া বলেন, ‘কাঁচা বাজরে তো আগুন নাগছে। হিসাব করি আসলাম একরকম, আইসা দেখি অন্যরকম। সমজির দাম হামার মত গরীবের নাগালের বাইরে বাহে। হামরা কী খালি লবন ভাত খেয়া থাকমু?
শহরের গোলাহাট এলাকার বাসিন্দা সামির কাল্লু রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন এর কম বেশিও হয়। কিন্তু সবজি বাজারে গিয়ে আর হিসাব মেলাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘যে ভাবে কাঁচা শাক সবজির দাম বেড়েছ তাতে এ আয়ে কোন মতেই আর সংসার চলে না। বেঁচে থাকাই এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এভাবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সব ধরনের কাঁচা শাক সবজির দাম যেন সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষরা। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) শহরের পৌর সবজি বাজারসহ বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা শাক সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম আগের তুলনা অনেক বেড়ে গেছে। কোন সবজিই ৫০ এর নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক মাসের মধ্যে সব শাক সবজিতে গড়ে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে।
সবজি বিক্রেতা খালিদ জানান, আলু ছোট বড় আকার ভেদে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে যেটি মাসখানে আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। কেজি প্রতি ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আদা ৩০০-৩২০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, ঢেঁরস ৬০ টাকা, বরবটি ৭৫-৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, নেনুয়া, ৫০-৫৫ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, চিচিংগা ৫০-৬০, বেগুন ৫৫-৬০, কচু ৬০ টাকা, শসা ৬০-৬৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪৫-৫৫ টাকা, পাতা কপি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা ওয়াকার আনসারী বলেন, সবজির মূল্য যে হারে বাড়ছে। চাহিদার অর্ধেক নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বাসায়। তারা যে দামে দেবে, আমাদের সেই দামে কিনে খেতে হবে। আবার অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার দামও বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা যেনো জিম্মি ।
গোলাহাট বাজারে কথা হয় গৃহিনী নুর জাহানের সাথে। তিনি জানান, বাজারে সব সবজির দামই বেশি। আমি পটল কিনেছি ৭০ টাকা কেজিতে। যে বাজেটে সংসার চলানোর কথা তা এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। নিত্যপন্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয়তো বাড়ছে না।
দ্রব্যমূল্যের এমন লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষেরা। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষেরা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলতে পারছেন না। যার ফলে তাদের দু-বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে দাম বাড়ার বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতারা পরষ্পর বিরোধী কথা বলছেন। ক্রেতারা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই অযৌক্তিকভাবে সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে। আর খুচরা বিক্রেতারা বলেন, পাইকারী বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, আমরা খুব শিগগিরই বাজার মনিটরিংয়ে নামছি। দাম নাগালের মধ্যে রাখতে যা করার দরকার আমরা নিয়মের মধ্যে করে যাবো।