রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারজিস আলম গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গুলি চালাল দুর্বৃত্তরা, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী আহত গাজীপুরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা ভাঙ্গুড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু লালমনিরহাটে অস্ত্রসহ যুবদলের দুই নেতা আটক ভাঙ্গুড়ায় ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করায় ইন্সট্রাকটরকে মারধোর ঝিকরগাছা গদখালী ফেব্রুয়ারির ৩দিবসে শতকোটি টাকা আয়ের আশা চাষীদের কোনাবাড়ীতে আরও এক ছিনতাই কারী গ্রেফতার প্রতিটি সফল আন্দোলনের পেছনে ছাত্রছাত্রীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল,এম মঞ্জুরুল করিম রনি বশেমুরকৃবি’তে আনন্দ-উৎফুল্লে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৮ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ফুসে উঠেছে গাজীপুর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা শহরের রাজবাড়ি মাঠ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েল সামেন রাজবাড়ি সড়কে এসে অবস্থান করে রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠন সংগঠক সারজিস আলম রাজবাড়ি সড়কে আসেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
বিকালে সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল গাজীপুর শহরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা রাজবাড়ি সড়কের পাশে আওলামীলীগের কার্যালয়ের সামনে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভাংচুর করে। গত ৪ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য সদর মেট্রো থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিকালে রাজবাড়ি সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এ দেশটা আমাদের এ দেশের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করবো। তারা মানে এই নয় যে, পুলিশ মামলা বাণিজ্য করবে। ১৫জনকে ধরেছে আর পরের দিনে তাদের জামিন দিয়ে দিবে। তিনি বলেন, আকম মোজাম্মেল হচ্ছে গণহত্যাকারী। সে আওয়ামীলীগের দোসর। আমরা ছাত্রদের নিয়ে ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবো। ১৭ বছর ধরে যারা নিপিড়ন চালিয়েছে এই গাজীপুরকে সন্ত্রাসের আতুরঘরে পরিণত করেছে তাদের আমরা অপারেশন ডেভিল হান্ট এর মাধ্যমে ধরতে হবে। একটাও যেন বাদ না যায়।

সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। এই অন্তর্বতীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ইন্টেলিজেন্স যদি আজকে রাতের মধ্যে গতকালকের হামলায় জড়িত খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে না পারে তাহলে আমাদেরকে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

শনিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী সড়কে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন।
এর আগে সকাল থেকে গাজীপুর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শহরের রাজবাড়ি সড়ক ও রাজবাড়ি ময়দানে এসে জড়ো হয়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকে। তারা এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে না পাঠানো পর্যন্ত রাজপথে অবস্থানের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কোথাও আমাদের কোনো সহযোদ্ধার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো বাংলাদেশ আবার নতুন করে জেগে উঠবে। আমরা প্রয়োজনে যেমন ঢাকায় নামতে পারি, যেমন গাজীপুরে আসতে পারি, আমরা প্রয়োজনে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় যেতে পারি। আমরা অভ্যুত্থানে দেখিয়েছি, এদেশের ছাত্র-জনতা সঠিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু একটা ধৈর্যের বাঁধ আছে। এই দেশে প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা কাজ করছে তারা যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলে তাহলে দেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব দেখতে হবে।

এর আগে শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় দেশ ছেড়ে পলাতক সাবেক আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা ঘটনাস্থলে গেলে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ হামলার প্রতিবাদে রাতেই গাজীপুর মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন।
সমাবেশে সারজিস আলম অভিযোগ করেন, আমাদের কিছু বলে কেউ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যখন নিরীহ ছাত্রদের উপর হামলা করা হয়েছিল বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশকে খবর দিলেও তারা সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে আসেনি। ঘটনা ঘটার প্রায় আড়াই ঘন্টা পর তারা ঘটনাস্থলে আসে।

এর আগে গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের উপর খুনি আকম মোজাম্মেল হকও জাহাঙ্গীর এবং আওয়ামী দোসরদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে শহরের রাজবাড়ি মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটি। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠন অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান, কেন্দ্রীয় সদস্য এমএম শহিদ, গাজীপুর সদর থানা কমিটির প্রতিনিধি খন্দকার আলামিন, কালিয়াকৈর থানার প্রতিনিধি সুমন মিয়া, গাছা থানার প্রতিনিধি মাস্টার আনিসুর রহমান, টঙ্গী পশ্চিম থানার প্রতিনিধি নাবিল প্রমুখ।

হাসপাতালে সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহ শুক্রবার রাত তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে এবং তাদের খোঁজখবর নিতে রাতেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। যেভাবে হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের
ঢাকায় ধানমন্ডির ভাংচুরের ঘটনার পর গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা প্রচার করেন যে কোথাও কোনো প্রকার ভাংচুর না করার জন্য। সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা খবর পান যে ধীরাশ্রম এলাকায় পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা গণহত্যা মামলার আসামি আকম মোজাম্মেল হকের বাসায় ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। ভাংচুর ও লুটপাট ঠেকাতে ১৫-২০জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। এসময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, রামদাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বাড়ির ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। যে সব শিক্ষার্থী আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যায় তারাও হামলার শিকার হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫জনকে ভর্তি করা হয়।
এদিকে হামলাকারীরা মেবাইল ফোনে লাইভে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ভিডিও ধারন করে প্রচার করে। আওয়ামীলীগের পেইজে আপলোড করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকায় শেখ মুজিবের বাড়ি ভাংচুরসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামীলীগের নেতাদের বাড়ি ভাংচুর হওয়ার পর গাজীপুরে আকম মোজাম্মেল হকের বাড়িটি সশস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছিল স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি জানতেন না শিক্ষার্থীরা। পরে তারা ভাংচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রমনের শিকার হন।

সদর থানার ওসি সাময়িক বরখাস্ত শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সম্মিলিত পরিকল্পিত হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে বারবার পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ উঠে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন। পরে বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সদর থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন। সমাবেশস্থলে পুলিশ কমিশনার
বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের সমাবেশ চলাকালে বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান সমাবেশস্থলে যান এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফ্যাসিবাদি আমলে আমাকে অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছিল। আপনাদের আন্দোলনের ফলে আপনাদের আন্দোলনের সাথে আমিও আন্দোলন করেছি। এ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করেছি। তিনি বলেন, আপনাদের শরীরে যে ফ্যসিবাদ বিরোধী রক্ত আমার শরীরেও একই রক্ত।
গত রাতে শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে সে জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যারা শিক্ষার্থীদের উপর আঘাত করেছ তাদের প্রত্যেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হবে। যে সব পুুলিশ দায়িত্বে অবহেলা করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাবেশে তিনি সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন যেসব পুলিশ ফ্যাসিবাদের সাথে আতাঁত করবে তাদের পুলিশের চাকরি করতে দেওয়া হবে না। এতদিনে যে ফ্যাসিবাদ পুলিশ তৈরী হয়েছে সেই ফ্যাসিবাদ থেকে পুলিশকে বের হয়ে আসতে হবে।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গত ১৭ বছর যরা আপনাদেরকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে তারা আবারও এ দেশের উপর জুলুম করেছে এখনো তারা মাথাচারা দিচ্ছে। তাদের এ মাথাচাড়া দেওয়া কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
ধীরাশ্রমে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে ১৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর