বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

উন্নয়নের মুকুটে আরেকটি পালক

রিপোর্টারের নাম : / ১৩০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীর জন্য আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। ’ তিনি গতকাল সকালে দেশের প্রথম মেট্রো রেল উদ্বোধন করে এ কথা বলেন।

রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে দেশে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বিদ্যুত্চালিত মেট্রো রেল। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেল প্রকল্পের ১১.৭৩ কিলোমিটার ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর উদ্বোধন করেন।

উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের মাঠে মেট্রো রেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি সেখানে সুধী সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা, জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রওশন আরা মান্নান ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবীব হাসান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো কাজ করতে গেলে অবশ্যই সাহসের প্রয়োজন হয়, সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা নিয়ে সম্পন্ন করেছে। যে কারণে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রো রেল উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ। প্রথমত, মেট্রো রেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করল। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রো রেল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেট্রো রেল পরিচালনায় অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা থাকবে না। এটি পরিচালনায় আমরা নিজেরাই স্মার্ট নাগরিক তৈরি করব। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হবে। ’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোন মতে!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। সব বাধা অতিক্রম করে গড়ে তুলব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। ’

অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেট্রো রেল করে শেখ হাসিনা আবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইয়েস উই ক্যান। কেন আমরা পারব না? আমরা বীরের জাতি। মানুষ বলে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে শেখের বেটি বিশ্বব্যাংকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে…শেখের বেটি দেখিয়েছে, আমরাও পারি। ’

জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা শুরুতেই কয়েকটি বাক্য বাংলায় বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই সম্পর্ককে আমি আরো গভীর করতে চাই। ’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য আমি কাজ করব। …বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় জাপান সব সময় পাশে থাকবে। ’

জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজ। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের পারস্পারিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক অটুট আছে। মেট্রো রেল বাংলাদেশ ও জাপানের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। ’ মেট্রো রেল প্রকল্পে জাইকাও অর্থায়ন করেছে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ব্যবহারকারীদের দায়িত্ব : দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রো রেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এর মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা—এসব কিছু কিন্তু যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের দায়িত্ব। ’ তিনি বলেন, এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এসব জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যত্নবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেলস্টেশনগুলোতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে, সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলো মেনে চলেন। ’

নিহত সাত জাপানি নাগরিকের স্মৃতিস্মারক স্থাপন : উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করেন ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত সাত জাপানি নাগরিককে। ওই সাত নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ’ প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁদের স্মরণে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়ীতে মেট্রো রেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নতুনবাজার আন্ত লাইন সংযোগ স্টেশনে স্থানান্তর করা হবে।

জঙ্গি হামলায় জাপানি নাগরিকরা নিহত হওয়ার পর মেট্রো রেলের কাজ পুনরায় চালু করার পেছনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

প্রথম যাত্রী শেখ হাসিনা : উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে টিকিট কেটে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে মেট্রো রেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কাটেন তিনি। এরপর বোন শেখ রেহানা কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন। এর আগে তাঁরা স্টেশনে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।

দিয়াবাড়ী স্টেশনে রেলের রীতি অনুসারে ট্রেন চলা শুরুর আগে প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা নেড়ে সংকেত দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সংকেতের পর প্রথম ট্রেনটি চলা শুরু করে। এর কিছু সময় পর দ্বিতীয় আরেকটি ট্রেনে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে চলা ট্রেনটির চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তত ২০০ যাত্রী মেট্রো রেলের প্রথম যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হন। রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় আগুনে দগ্ধ ব্যক্তি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, রিকশাচালকসহ নানা পেশার মানুষ প্রথম ট্রেনে উপস্থিত ছিলেন।

দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রম করতে ১০ মিনিট সময় লাগার কথা থাকলেও উদ্বোধনী ট্রেনটিকে খানিকটা ধীরগতিতে চালানো হয়। ফলে ১৮ মিনিটে ট্রেনটি আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়। ২টা ১১ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী স্টেশন থেকে বেরিয়ে তাঁর গাড়িবহর নিয়ে গণভবনের দিকে চলে যান। এ সময় রাস্তার দুই পাশে বিপুলসংখ্যক মানুষ হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানায়।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার মাঝে বসে ভ্রমণ করলেন মতিয়া চৌধুরী : দেশের প্রথম মেট্রো রেলে যাত্রী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এ যাত্রায় তিনি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মাঝে বসে ছিলেন।

গতকাল সন্ধ্যায় মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘উনারা আমাকে তাঁদের মাঝখানে বসতে দিয়েছেন, আমার সৌভাগ্য। বসার সময় এত কিছু ভেবে বসিনি। এখন দেখছি মেট্রো রেলের ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে গেলাম। ’ যাত্রার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার অভিব্যক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জাতিকে যে আরেকটা বড় কিছু দিতে পেরেছেন সেই প্রাপ্তির আনন্দ ছিল দুই বোনের চেহারায়। ’ তিনি বলেন, ‘উনারা তো ভোগ করতে আসেননি। উনারা শুধু জাতিকে দিয়েই যাচ্ছেন। ভোগের নয়, ত্যাগের আনন্দ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পাচ্ছেন। ’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের উদ্ধৃতি দিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি/আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী। ’ ঠিক এ রকমই আমাদের নেত্রী। উনি সব হারিয়েছেন। এর পরও দেশে ফিরেছেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ’

ডাক টিকিট ও ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত : মেট্রো রেল উদ্বোধন উপলক্ষে ডাক টিকিট ও ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক টিকিটটি প্রকাশ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ৫০ টাকার স্মারক নোটটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর