বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
লাইসেন্স ব্যতীত ভাটা পরিচালনা করায় কুড়িগ্রামের ৫টি ভাটা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন উল্লাপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের দাবীতে রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন আগামী ৭ দিনের মধ্যে হৃদয় এর লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তরের দাবি ভারত থেকে ফল আমদানি বন্ধ দ্বিতীয় ধাপের আখেরী মোনাজাত শেষ,৫৯ তম বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা ইজতেমা ময়দানে চলছে হেদায়েতি বয়ান,আখেরী মোনাজাত দুপুর ১২ টায় ইজতেমায় আরও দুই মুসল্লীর মৃত্যু ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো সব জায়গায় রয়ে গেছে,কারামুক্ত মাওলানা মহিবুল্লাহ ভাঙ্গুড়ায় ট্যাপেন্টডল ট্যাবলেটসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার জয়পুরহাটে অর্ধেক দামে পিয়াজ আলু বিক্রি, উপকৃত সাধারণ মানুষ

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কৃষাণের ইংরেজী চর্চাতে সম্ভাবনা

রিপোর্টারের নাম : / ১০৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

মো: আসাদুজ্জামান ঠাকুরগাঁও সংবাদাতা: কখনো কাস্তি হাতে ফসলের মাঠে ধান কাটতে কাটতে, কখনো আবার গৃহস্থালির কাজ করতে করতে গবাদি পশুর পাশে। চলতে ফিরতে শিশুদের নিয়ে সবসময় ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা জারি রেখেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অদম্য এক কৃষাণ। ভিনদেশী ভাষা গ্রামের প্রতিবেশীরা বুঝতে না পাড়ায় অনেক সময় হাসি ঠাট্টা করছে প্রতিবেশীরা। তবুও ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা থামাননি এই কৃষাণ যুবক। ইংরেজীতে কথা বলার সময় অনুপ্রেরণা এবং সম্ভাবনা দেখছেন নিজের ভেতর।

ধানের শীষের উপর জমে থাকা শিশির বিন্দু তখনও শুকোয়নি। ধারালো কাস্তি হাতে দুজন যুবক কৃষাণের সাথে এক তরুণ যুবক কৃষাণ ধান কাটছে আর ইংরেজীতে কথা বলছে। অপর দুই কৃষাণ সেসব ইংরেজী কাজের ফাঁকে শুনছে এবং নিজেরাও দু এক বাক্য ইংরেজী চর্চা করছে। ফসলের মাঠে ক্লান্তির ঘাম মুখে সেই কৃষাণের ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা যে অনায়াসে শক্তি যোগাচ্ছে এ উপলব্ধি নি:সন্দেহে করায় যায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ার কশালগাঁও গ্রামের আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারে বেড়ে উঠেছে সুজন পাহান। দু বছর বয়সে বাবা বগা পাহান সংসার ফেলে অন্য দেশ ছেড়ে চলেগেছে। বছর কয়েক পর বাবার মৃত্যুর সংবাদও পায় সুজনের পরিবার।

সে সময় থেকে মাঠে কামলা দিয়ে সন্তানকে একা হাতে সামলেছে মা দুলালি পাহান। খুব বেশিদিন কাজ করতে পারেননি তিনিও। অসুস্থতা জনিত কারনে কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়েছে সুজন যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সেই থেকে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সুজনের শুরু হয় জীবিকার যুদ্ধ। ঘরে অসুস্থ্য বৃদ্ধা মাকে ও ঘরের কাজ সামলে সুজন মাঠে চলে যান কামলার কাজে। কিন্তু মায়ের চোখে লালিত স্বপ্ন, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়ে উঠা একমাত্র মেধাবী ছেলে একদিন অনেক বড় চাকরি করবে।

মায়ের স্বপ্ন আকড়ে ধরে সুজন মাঠে কাজ করে হলেও নিজের পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছে। সুজনের সহপাঠিরা শিক্ষাজীবন থেকে অকালে ঝড়ে পড়লেও সুজন নিজের শিক্ষা জীবনকে টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে। সুজন বর্তমানে স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রী তৃতীয়বর্ষে অধ্যয়ন করছে।

আপনাদের নিশ্চয় বাংলা চলচ্চিত্রের হিরে মানিক সিনেমার সেই কালজয়ী গানের কথা মনে আছে- “এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো, সেই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবো”।

সুজন সেই চাঁদের পাহাড় দেখার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যের মতো ছুটছে। অন্যের জমিতে আশ্রিতা হয়ে ছোট্ট এক কুড়ে ঘরে থেকে সে স্বপ্ন দেখছে নিজের জীবনমান উন্নয়ন করে কিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের সামনে এগিয়ে নেয়া যায়। তাদের কাছে নিজেকে অনুপ্রেরণা করে গড়ে তোলা যায়।

এই প্রতিবেদককে সুজন পাহান জানিয়েছেন, স্মার্ট ও টেকনোলজির যুগে ভালোকিছু করতে গেলে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজী শেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনটনের সংসারে যেখানে পাঠ্যবইয়ে পড়ার সময় নেই সেখানে ভালো ইংরেজী শিখতে চাওয়াটা নিজের কাছেও কখনো কখনো অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। তবে ইংরেজীতে কথা বলার প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমি নিজের ভেতর সম্ভাবনা দেখছি। ফেসবুকে ইংরেজীতে কথা বলার ভিডিও দেখেই ইংরেজী রপ্ত করার চেষ্টা করেছি এবং নিজের ইংরেজী চর্চার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করছি। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজী কোর্স করার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি জীবনে।

তিনি আরও বলেন, সারাদিন ইংরেজীতে কথা বলার চেষ্টা করি। মানুষ হাসি ঠাট্টা করে। অনেকেই ভাবে আমার বুঝি মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমি এসবের তোয়াক্কা করিনা। মাঠের ফসলের সাথে কাজের সময়, গৃহস্থালির কাজে ও গবাদি পালনের সময় সবখানে ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা করি। ইংরেজী চর্চা আমাকে অনুপ্রাণিত করে এবং স্বপ্ন দেখায়। নিশ্চয় একদিন ভালোকিছু হবে।

তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইংরেজী শেখার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছেনা। মাঠে কাজ করে যা আয় হয় তা নিত্যদিনের খরচ আর জীবন যাপনে চলে যায়। আমার একটি ছোট চাকরি হলেও স্বপ্ন পূরণের একধাপ এগোতে পারতাম। কোথাও কোন সহযোগিতা পেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটিও বেসরকারি এনজিও সংস্থা (ইএসডিও) ২০১৮ সালে দুই ধাপে ২৪ হাজার টাকা দিয়েছিলো, এছাড়াও উপজেলা পরিষদ থেকে আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তির অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ৪০০ টাকা ২০১৯ সালে শিক্ষা উপকরণ পেয়েছিলাম। যা আমার লেখাপড়ার কাজে সহযোগি ভূমিকা পালন করেছে। সেই থেকে আর কোন সহযোগিতা পাইনি।

সুজনের সাথে মাঠে কাজ করেন পলাশ পাহান। বলেন, আমি সুজনের সাথে একই স্কুলে পড়তাম অভাবের কারনে পড়াশোনা ছেড়েছি। কিন্তু সুজন অভাবের সাথে যুদ্ধ করে পড়াশোনা করছে। ও অনেক মেধাবী। সুজন মকঠে কাজ করুক এটা আমরা চাইনা। ওর জন্য কোন সুযোগ সৃষ্টি হলর ও অনেক ভালো কিছু করবে।

অপর কৃষাণ জোতিষ পাহান বলেন, সুজনকে এই কৃষি কাজে যদিও মানায় তারপরেও জীবিকার তাগিদে তাকে করতে হয়। কিন্তু তাকে ভালোকিছু করার সুযোগ দেয়া হলে সে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে এটা আমাদের বিশ্বাস। ও নিজে ইংরেজী চর্চা করে এবং দু একটা ইংরেজী আমাদেরও চর্চা করান। ওর সাথে কাজ করায় আমি বলতে না পারলেও কয়েকটা ইংরেজী শব্দ বুঝতে পারি।

সুজনের মা দুলালি পাহান বলেন, আমার ছেলে অনেক মেধাবী। অনেক কষ্টে তাকে বড় করেছি। যদি নিজে কাজ করতে পারতাম তাহলে তাকে কখনোইসংসার সামলাতে এত চাপ নিতে হতোনা। ছেলেটার একটি চাকরি হলে খুব উপকৃত হতাম।

ফসলের মাঠ থেকে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে সুজন যখন বাড়ি ফিরে মস্তিষ্কজুড়ে তার একরাশ স্বপ্ন ভর করে থাকে। সুজন চায় নিজে সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে যেতে এবং সফল হতে। সাথে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের মাঝে বিলাতে চায় নিজের ভিতরে থাকা সুপ্ত শিক্ষার আলোটুকুও। তার আগে নিজেকে ভেঙ্গে গড়ার সুযোগ চান দরকার সবার আগে। একদিন সুজন সফল হবে, মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে, যারা সুজনকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছে তাদের সমুচিন জবাব হবে সুজনের সফলতা এমন একটি দিনের দেখা সে পাবে এমন প্রত্যাশা করে সুজন, তার মা, সহপাঠি, সহকর্মী ও তকর শুভাকাঙ্ক্ষীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর