মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন

ঠান্ডায় কাপছে লালমনিরহাট!খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারনের চেষ্টা!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ১৭৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩

লালমনিরহাট জেলাটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। এই জেলায় শীতের প্রভাব অন্যান্য জেলার তুলুনায় একটু আগেই শুরু হয়। আবার নদী ও সীমান্ত বেষ্টিত পুরো জেলার মানুষজন উন্নয়নের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিমালয়ের পাদদেশের জেলা হিসেবে এ জেলায় কিছুটা আগেই শীতের প্রভাব পড়ে যায়। শীত বিদায়ও নেয় বেশ কিছু সময় পড়ে। যার কারনে শীতের ঠান্ডা কিছুটা দীর্ঘ সময় থাকে জেলাটিতে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলা জুড়ে চলছে শৈত্য প্রবাহ। শীতের ঘন কুয়াশার সাথে যুক্ত হওয়া শৈত্য প্রবাহের ঠান্ডা বাতাসে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন এ জেলার নিন্মআয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। মাঝে মধ্যে দুপুর গড়িয়ে সুর্যের দেখা একটু-আধটু মিলে। ফলে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে কয়েকগুন। ঘন কুয়াশার সাথে শৈত্য প্রবাহের ঠান্ডা বাতাসে জন জীবন বিপর্জয় ঘটেছে। ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেকে। ফসলের ক্ষেতেও এর প্রভাব দেখা দিয়েছে। ঘন কুয়াশার কারনে ফসলের ক্ষেতেও দেখা দিয়েছে নানান রোগ। কৃষকরা আলুসহ সকল সবজি ক্ষেতে এবং আমনের বীজতলায় শীত সহনীয় বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহের কারনে খুব একটা কাজে আসছে না। ফসলের পাশাপাশি শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা।

ঠান্ডার প্রকোপে কাজের সন্ধানে বাহিরে যেতে পারছেনা মানুষজন। দিনের বেলায় রাস্তায় গাড়ি চালাতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। অনেকে আবার কাটখোট্টা জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টাও করছেন। অন্যান্য বছরে দেখা গেছে, ঠান্ডার প্রকোপের সময় অনেক বেসরকারি সংগঠনগুলো গরম কাপড় কম্বল বিতরণ করছিলেন। সে-তুলুনায় এখনো সরকারি ভাবে, ব্যক্তিগত ভাবে, তেমন কোন উদ্যোগ নেই এ জেলায়।

সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আব্দুল খালেক (৬২) বলেন, টানা কয়েকদিনের ঠান্ডার কারণে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে, রাতে ঘুমাতে পাইনা। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় চলাফেরাও করতে পারিনা। এখন পর্যন্ত কোন গরম কাপড় বা কম্বল কেউ দিলো না। গরীবের বারো মাসে কষ্ট থাকে। মরিলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায় বাহে, এভাবেই কথাগুলো বলেন ওই বৃদ্ধ।

তিস্তাপাড়ের দিনমজুর লোকমান হোসেন (৫৮) বলেন, শীতের ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারণে আমরা নদীপারের লোকজন খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সারাদিন ঘরের ভিতর শুয়ে থাকতে হচ্ছে। ঠান্ডার কারণে বাহিরে যেতে পারছিনা। গতবার এরকম সময়ে অনেক স্যারেরা এসে খোঁজ খবর নিছে, গরম কাপড় ও কম্বল দিছে, এবারে কেউ আসলো না। আমরা চর বাসিরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

জেলার ৫টি সরকারী হাসপাতালেই রোগীর ভিড় আগের থেকে বেড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছে হাসপাতাল গুলোতে। আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। খুব সহজে ছাড়ছে না শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দ্দি, কাশি, নিউমেনিয়াসহ নানান ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দৈনিক রোগী আসছেন ৩/৪ শত। যার অধিকাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মোরল হুমায়ুন কবির বলেন, গত কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা বেড়েছে, বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি ভাবে গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ হচ্ছে তা চাহিদার তুলুনায় যত সামান্য। তাই সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন সংগঠন গুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে গরীব অসহায় দিনমজুর লোকগুলোর পাশে দাড়ানো আহ্বান জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর