তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ী নেজাম) এর মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তাবলীগের এই বিভাজন এক মিনিটের মধ্যেই সমাধান হওয়া সম্ভব। যদি মাওলানা সাদ সাহেব তার আমিরত্ব থেকে সরে আসেন, তার ভুলকৃত বয়ানের জন্য তওবা করেন এবং ভবিষ্যতে এরকম বয়ান আর করবে না এটা অঙ্গীকার করেন।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,তাবলীগের কাজের প্রকৃত জিম্মাদার হযরত ওলামায়ে কেরাম। তাবলীগের মেহনতের তিন হযরতজী, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ:), মাওলানা ইউসুফ সাহেব (রহ:), মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব (রহ:) সবাই আলেম ছিলেন। মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ:) শুরু থেকেই ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে এই মেহনতের (তরতীব) পথ ও পদ্ধতি কি হবে তা ঠিক করেছেন। তাবলীগে আলেমরা কোথা থেকে আসলো এ প্রশ্ন করা সাদপন্থীদের গোড়ামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও বলেন, সাদপন্থীরা বারবার এ কথা বলে যাচ্ছে- তাবলীগের মেহনতের ভিতর তৃতীয় পক্ষ আলেমদের কারণে আজকের এই সমস্যা। আমরা তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, তাবলীগের মেহনত দ্বীনের অন্যতম একটি মেহনত। এবং দ্বীনের ধারক-বাহক হচ্ছেন হযরত ওলামায়ে কেরাম। মাওলানা সাদ সাহেব বারবার বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে দ্বীনের মেহনতকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, আর ওলামায়ে কেরাম বসে থাকবেন এটা কখনোই হতে পারেনা।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৫ সালে সমস্ত দেশের তাবলীগের মুরুব্বীরা মিলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, দাওয়াত ও তাবলীগের এই মেহনত এখন থেকে একক আমিরের পরিবর্তে শুরায়ী নেজামের অধীনে পরিচালিত হবে। এবং ১০ জনের একটি শুরার জামাত গঠন করা হয় যার ভিতরে মাওলানা সাদ সাহেবও ছিলেন। হঠাৎ করেই ২০১৭ সালে মাওলানা সাদ সাহেব নিজেকে আমির হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং তাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক তাবলীগের মুল মেহনত থেকে আলাদা হয়ে যান। যারা বর্তমানে সাদপন্থী হিসেবে পরিচিত।
এর ভিতর মাওলানা সাদ সাহেব কোরআন সুন্নাহ বিরোধী একাধিক বক্তব্য শুরু করে দেন। যার ভিতরে নবীদের ও সাহাবীদের দোষ চর্চা করা অন্যতম। এহেন পরিস্থিতিতে দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে ফতোয়া দেওয়া শুরু করেন। এবং এখন পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে আস্থা আনতে পারেননি। আবার মাওলানা সাদ তার ভুল বয়ানের জন্য রুজু করলেও (ক্ষমা চাইলেও) পরবর্তীতে সে একই বয়ানের বিভিন্ন স্থানে পুনরাবৃত্তি করেন।
তিনি আরো বলেন, উনারা বারবার মাওলানা আরশাদ মাদানী সাহেবের কথা বলছিলেন। এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রিন্সিপাল সাহেব বলেছিলেন– মাওলানা আরশাদ মাদানী সাহেব মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে কিছু বলে থাকলে “এটা একান্ত তার নিজস্ব অভিমত”। মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থানের কোন পরিবর্তন আসেনি।
হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, সাদপন্থীদের এ কথা বলব- আপনারা দীর্ঘ ২০ বছর (১৯৯৫-২০১৫) শুরায়ী নিজামের অধীনে থেকে তাবলীগের মেহনত করেছেন। যেটা আমাদের আকাবিদের সিদ্ধান্ত ছিল। মাওলানা সাদ সাহেব নিজেকে আমির ঘোষণা করার পর, আপনারা আকাবির মুরুব্বিগনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তার অনুসরণ করা শুরু করেন। আপনারা সেখান থেকে ফিরে আসুন। আপনাদের আমিরকে তার এমারত থেকে ফিরে এসে তার ভুলগুলো স্বীকার করে তওবা করতে বলুন।
মাদ্রাসার ছাত্ররা মাঠে কি করে? এ বিষয়ে তিনি জানান- টঙ্গী মাঠের ভেতর কাকরাইল মাদ্রাসার একটি শাখা (হেফজ বিভাগ) রয়েছে। এ সমস্ত কোমলমতি ছোট ছোট শিশুদেরকে কেন্দ্র করে তারা বারবার মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে। আপনারা ইতিমধ্যে জেনে থাকবেন, ইজতেমার সময় ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ইজতেমার জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজে মাদ্রাসার ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করে থাকে। এ সকল সত্য সকলেরই জানা। কিন্তু সাদপন্থীরা তা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে তাবলীগের মেহনতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন সাদপন্থীদের নামে ইতিমধ্যে হত্যা মামলা করা হয়েছে, আরো বিভিন্ন মামলা শীঘ্রই করা হবে। ইতিমধ্যে তাদের একজনকে (মুয়াজ বিন নূর) গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল- তারা খুব শীঘ্রই এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন।