শিরোনামঃ
কাজিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি বরদাস্ত করবে না প্রশাসন শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য -উপাচার্য ড. মশিউর রহমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মেজবাহ্ উদ্দিন টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজীর অভিযোগে গ্রেফতার-৮ চতুর্থ দিনেও ঢাকার জনগণের মাঝে হাবিব হাসান শাহজাদপুরে দিনমজুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ  উদ্ধার  সিরাজগঞ্জে মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি প্রদর্শন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রেল উন্নয়নে সহযোগিতায় আগ্রহী রাশিয়া সিরাজগঞ্জে তৃষ্ণার্ত মানুষদের মাঝে স্যালাইন ও শরবত বিতরণ রেলপথে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা, শুরু জুলাই থেকে এআই প্রযুক্তিতে চলবে সরকারি অফিস অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ শরবত বিতরণ করতে গিয়ে জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে ১২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার সুপারিশ আমবাড়ীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া সংশোধন করা হচ্ছে শ্রম আইন রেডিয়েশন প্রয়োগে ঘরেই সংরক্ষণ করা যাবে পেঁয়াজ চিকিৎসকরা অফিস টাইমে হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা প্রবৃদ্ধির দৌড়ে চীন মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

দেশীয় খনির কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ

কলমের বার্তা / ৯৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

দেশীয় খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পথে হাঁটছে সরকার। কারণ, কয়লার চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু মার্কিন ডলারের সংকটে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন—পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, তারা দিনাজপুরের দীঘিপাড়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলনে পরিকল্পনা করছে। এই খনি এলাকায় প্রাথমিক জরিপকাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে।কয়লানীতি তৈরির ক্ষেত্রে মূল বিতর্ক মূলত তোলার পদ্ধতি নিয়ে। দেশে আসলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে না। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি ঠিক আছে। দীর্ঘ সময় পর শুরু হলেও কয়লা তোলার প্রক্রিয়া ইতিবাচক। বদরূল ইমাম, ভূতত্ত্ববিদ দেশের খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আন্দোলনের পর দেশীয় খনি থেকে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। যদিও দেশের খনিতে বিপুল কয়লা মজুত রয়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কয়লা তোলা নিয়ে জরিপ শেষে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এটি উপস্থাপন করা হবে। এরপর নির্দেশনা অনুসারে কয়লা উত্তোলনের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।

দেশীয় কয়লা উত্তোলনের চিন্তা উঠে এসেছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়ও। তিনি বলেছেন, দেশের কয়লাক্ষেত্রসমূহ থেকে কয়লা সংগ্রহের কারিগরি ও অন্যান্য সম্ভাবনা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

দেশে পাঁচ খনি

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো বলছে, দেশে আবিষ্কৃত কয়লা খনির সংখ্যা ৫। ৪টি আবিষ্কার করেছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর। এর মধ্যে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া থেকে ২০০৫ সালে কয়লা তোলা শুরু হয়। এ খনিতে কয়লা মজুত আছে প্রায় ৩৯ কোটি টন। বছরে ৮ লাখ টন কয়লা উত্তোলনের সক্ষমতা আছে সেখানে। এ কয়লা দিয়ে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিপাড়ায় অবস্থিত দীঘিপাড়া কয়লাখনি আবিষ্কারের সময় মজুত ধরা হয় ১৫ কোটি টন। রংপুরের খালাসপীরে কয়লার মজুত আছে প্রায় ৬৯ কোটি টন। আর দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাখনি জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে। সেখানে মজুত আছে ১০৫ কোটি টন কয়লা।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি আবিষ্কার করে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি বিএইচপি মিনারেলস। সেখান থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জি। ২০০৬ সালে আন্দোলনের মুখে সেই পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হয় সরকার।দীঘিপাড়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ।জরিপের তথ্য প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।

দীঘিপাড়ায় ব্যয় কত পড়বে

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, জার্মানিভিত্তিক মিবরাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ফুগরো ও অস্ট্রেলিয়ার রাঞ্জ পিনকক মিনারকোর কনসোর্টিয়াম (জোট) দীঘিপাড়া খনির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় ২০১৭ সালের মে মাসে।

২০২০ সালে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। দীঘিপাড়া খনি থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সুপারিশ করে এ কনসোর্টিয়াম। তারা বলছে, দীঘিপাড়ায় কয়লার সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ৭০ দশমিক ৬ কোটি টন। সেখান থেকে বছরে ৩০ লাখ টন করে কয়লা তোলা যাবে। প্রতি টনে উৎপাদন খরচ হতে পারে প্রায় ১৬০ ডলার।

অবশ্য টনপ্রতি ব্যয় অনেক বেশি বলে মনে করছে দেশের একমাত্র কয়লাখনি প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)। তাই পরামর্শক কনসোর্টিয়ামের জরিপ প্রতিবেদনটি যাচাই করতে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ডিএমটিকে দেওয়া হয়। তারা খরচ কমাতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। পরামর্শগুলো বাস্তবায়নে বিসিএমসিএল একটি কমিটি করেছিল। সেই কমিটির মতামত অনুসারে কয়লা উত্তোলন করা হলে প্রতি টনে খরচ কমবে প্রায় ৩০ ডলার। অর্থাৎ টনপ্রতি প্রায় ১৩০ ডলারে পাওয়া যাবে দেশীয় কয়লা।নতুন খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কয়লা তোলা নিয়ে জরিপ শেষে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এটি উপস্থাপন করা হবে।

জনেন্দ্র নাথ সরকার, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেশে এখন প্রতি টন কয়লা আমদানি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ ডলারে। বিশ্ববাজার অবশ্য স্থিতিশীল নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছর বিশ্ববাজারে কয়লার দাম টনপ্রতি ৪০০ ডলার ছাড়িয়েছিল। পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলন করতে পারলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানির চাপ কমবে। কিন্তু উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া এবং কাজ শুরুর পরও কয়লা উত্তোলনে আট বছর সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য, দেশে আমদানি করা কয়লায় চারটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। বাকি দুটি থেকে শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। এর বাইরে আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে। তাই ভবিষ্যতে কয়লার চাহিদা অনেক বাড়বে।

চূড়ান্ত হচ্ছে কয়লানীতি

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলছে, দেশের কয়লাখনিগুলো সবই উত্তরের জেলায়। যেখানে প্রচুর ফসল হয়। বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নষ্ট করে কয়লা তোলার পক্ষে ছিল না সরকার। এখন জ্বালানির প্রয়োজনে কয়লা তোলা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এখন কয়লানীতি করার বিষয়ে কাজ করছে। ২০০৮ সালে কয়লানীতির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। সেটিকে ভিত্তি ধরেই কাজ চলছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়টিতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। কয়লানীতির খসড়াও চূড়ান্ত হচ্ছে। যদিও এটি করতে কিছুটা সময় লাগবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কৃষিজমি নষ্ট করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কোনো সুযোগ নেই দেশে। তাই বড়পুকুরিয়ার মতো ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতেই কয়লা তুলতে হবে। বড়পুকুরিয়ায় খনির আশপাশে অনেক এলাকা দেবে গিয়ে জলাধার তৈরি হয়েছে। এতে অনেক কৃষিজমি নষ্ট হয়। তাই নতুন খনিতে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে আরও আধুনিক প্রক্রিয়া নিতে হবে। জলাধার তৈরি হলে তা বালু দিয়ে ভরাট করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে ফসলি জমি নষ্ট হবে না।

পেট্রোবাংলা ও বিসিএমসিএল সূত্র বলছে, জলাধার ভরাটের প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল। দীঘিপাড়ায় জরিপের পর কয়লা তোলার যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে, তা বড়পুকুরিয়া খনির মতোই। সেখানে এখন পর্যন্ত বালু ভরাটের কোনো ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়নি।

ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়লানীতি তৈরির ক্ষেত্রে মূল বিতর্ক মূলত তোলার পদ্ধতি নিয়ে। দেশে আসলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে না। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি ঠিক আছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় পর শুরু হলেও কয়লা তোলার প্রক্রিয়া ইতিবাচক। এর মধ্যে দেশে কয়লার চাহিদা বেড়েছে, আরও বাড়বে। এখন আমদানিনির্ভরতা জ্বালানি খাতকে ভোগাচ্ছে।

বদরূল ইমাম আরও বলেন, কয়লানীতি চূড়ান্ত না হলেও দীঘিপাড়া থেকে কয়লা তোলার প্রক্রিয়া এগোনো দরকার। তবে অবশ্যই জমি কম নষ্ট করে এটি করতে হবে, জলাধারে বালু ভরাটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

128


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর