ধ্বংস করা ৭৩ গাড়ির স্ক্র্যাপ বিক্রির উদ্যোগ কাস্টমসের
তিন দশক ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা ৭৩টি গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। গত ২৫ জুন থেকে শুরু হয় গাড়ি ভাঙার কাজ। ১০ জুলাই গাড়িগুলো ভাঙার কাজ শেষ হয়। এখন চলছে ধ্বংস করা গাড়ির স্ক্র্যাপ বিক্রির উদ্যোগ। ধ্বংস করা এসব গাড়ি এক ব্যক্তি পার্টস হিসেবে ৮০ লাখ টাকায় কিনতে লিখিত আবেদন দিয়েছিলেন কাস্টমসে। কিন্তু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো চলাচল অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর বিক্রি না করে ধ্বংসের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করল কাস্টমস।
নিলাম ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, ৮০ লাখ টাকায় গাড়িগুলো পার্টস হিসেবে বিক্রি করলে সরকার রাজস্ব পেত। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ক্রেতার আবেদন অগ্রাহ্য করায় আমদানি করা বিপুল গাড়ি ধ্বংস করতে হলো। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ধ্বংসযোগ্য গাড়ি কোনোভাবে বিক্রির সুযোগ নেই। ধ্বংস না করলে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
পুরোনো গাড়ি ধ্বংসের কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মুশফিকুর রহমান। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের পৃথক কোনো ডাম্পিং ইয়ার্ড নেই। তাই অকশন শেডে যেখানে গাড়িগুলো ছিল সেখানই ধ্বংসের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব গাড়ির মধ্যে সাধারণ মান থেকে বিলাসবহুল গাড়িও আছে।
এক ক্রেতা সব গাড়ি ধ্বংস না করে বিপুল অর্থে কিনতে চাইলেও তাকে কেন দেওয়া হয়নি এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিআরটিএ যেহেতু গাড়িগুলো চলাচলে অযোগ্য বলেছে, সেখানে কারও কাছে বিক্রির সুযোগ নেই। সব গাড়িই ধ্বংস করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সেলিম রেজা সময়ের আলোকে বলেন, পুরোনো গাড়িগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ আগে থেকেই নেওয়া হয়। নানা জটিলতায় গাড়ি ধ্বংসের কাজ আটকে যায়। অনেক সময় গাড়ি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আদালতে রিট মামলার কারণে নিলামে তোলা যায় না। ধ্বংস করার জন্য বাছাই করা গাড়ির অনেক ব্যাপারে রিট মামলা ছিল। মামলার কারণেই ধ্বংস করা গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি কিংবা ধ্বংস কোনোটিই করা যায়নি।
৭৪টি গাড়ি এক ক্রেতা কিনতে চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, একজন ক্রেতা একটি আবেদন জমা দিয়েছিলেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। কিন্তু কেউ চাইলেই তো আর বিক্রি করা যায় না।
অকশন শেডে থাকা ধ্বংসের জন্য বাছাই করা আমদানি পণ্য ধ্বংস করতে একটি কমিটি আছে। কমিটির মধ্যে কাস্টমস ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আছেন। তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাছাই করা গাড়িগুলো ধ্বংস করা হয়।
কতটি গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ৭৪টি গাড়ি ধ্বংসের জন্য বাছাই করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়ি ছিল কোস্ট গার্ডের। কোস্ট গার্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই গাড়িটি ধ্বংস করা হয়নি। বাকি ৭৩টি গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে পুরোনো গাড়িগুলো ধ্বংস না করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা প্রয়োজন ছিল বলে জানালেন চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, এত গাড়ি কাস্টমস টাকা ব্যয় করে কেটে কেটে ধ্বংস করল। তাতে কী লাভ হলো। এক ব্যক্তি সব গাড়ি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছিলেন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই ক্রেতার আবেদন পরীক্ষা করে দেখতে পারত। বিক্রি করা হলে সরকার বা কাস্টমস রাজস্ব পেত। এখন ধ্বংস করে বিক্রি করা হলে স্ক্র্যাপ লোহার দাম পাবে। কোনো লাভ হলো না।
কাস্টমসের সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ছাড় না করা গাড়িগুলোর সংখ্যা বাড়ছে কাস্টমসের অকশন শেডে। দীর্ঘদিন গাড়িগুলো ছাড় না করায় চলাচল অযোগ্য হয়ে যায়। এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় দুই শতাধিক। মামলাজনিত কারণে এর মধ্যে অনেক গাড়ি ধ্বংস করা যায়নি। কোনো ধরনের আপত্তি নেই কিংবা মামলা নেই, এ ধরনের গাড়ি শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়। দীর্ঘদিন শেডে পড়ে থাকা এসব গাড়িতে গজিয়ে ওঠে লতাপাতা। শেডেই গাড়ির চাকা দেবে যায়। অনেক গাড়ির শুধু চারপাশের কাঠামো ঠিক ছিল। ভেতরের পার্টসগুলো চোর চক্র চুরি করে নিয়ে যায় অনেক আগেই। পুরোনো খালাস না করা গাড়িগুলো বন্দরের অকশন ইয়ার্ডের বড় একটি জায়গাও দখল করে রাখে। এতে আমদানি করা গাড়ি রাখার জায়গার সংকট দেখা দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডের চারদিকে টুকরো টুকরো করে রাখা হয় বিলাসবহুল গাড়ির ভাঙা অংশ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লোহার টুকরো, চেসিস, গাড়ির চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। ধ্বংস করা গাড়ির মধ্যে আছে জিপ, প্রাইভেট কার, পিকআপ, মাইক্রো, ড্রাম্প ট্রাক, স্টেশন ওয়াগন, সুইপার লরি। এসবের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়িও আছে। গাড়িগুলো ধ্বংসের পর এখন চলছে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির প্রক্রিয়া। এ জন্য ফের নিলামের আয়োজন হবে। সেই নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে ৭৩ গাড়ির স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হবে।
এ ব্যাপারে কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, ধ্বংস করা হলেও আমরা স্ক্র্যাপগুলো ক্রেতার কাছে সরাসরি বিক্রি করব না। সেই স্ক্যাপগুলো বিক্রির জন্য আবার নিলাম ডাকা হবে। নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।
আমদানি করা গাড়িগুলো কাস্টমসের সিদ্ধান্তহীনতায় ধ্বংস করতে হলো বলে মনে করেন বারভিডার নেতারা। সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর সময়ের আলোকে বলেন, রাজস্ব বিভাগ সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করেছে। যার কারণে আমদানি করা বিপুল গাড়ি গ্রাহকের হাতে পৌঁছেনি। বন্দরেই ধ্বংস করতে হলো। বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়িগুলোর বিপুল মূল্য আছে। ধ্বংস না করে কীভাবে ছাড় করা যায় বা সময়মতো নিলামে তোলা যায় তার কাজটি করবে রাজস্ব বিভাগ। কিন্তু তারা সেই কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই গাড়িগুলো ধ্বংসই করতে হলো।