রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

নিজেদের রাজাকার বলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা ছাড়া কিছু নয়

রিপোর্টারের নাম : / ৩২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

নিজেদের ‘রাজাকার’ ঘোষণা করে কোটা বিরোধীদের দেওয়া স্লোগানে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যসহ প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে থাকা বিশিষ্ট নাগরিকেরা এই স্লোগানকে বেদনাদায়ক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবমাননাকর বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে পড়া রাজনৈতিক অপশক্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এই স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে।

গত কদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবিতে মাঠে রয়েছে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। তবে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি অশ্রদ্ধা অসম্মান জানানোর গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে।

সর্বশেষ রবিবার বিকেলে চীন সফরের বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আবেগী কণ্ঠে আরও কিছু কথা বলেন। তার বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বেশ আবেগঘন প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন। তবে একই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দেয় কোটাবিরোধীরা। রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। ‘মেধা না কোটা/মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
কোটা বিরোধীদের এমন স্লোগান শুনে রবিবার মধ্যরাতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। এক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমমনাদের তৎক্ষণাৎ রাজধানীর শাহবাগে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। পোস্টে তিনি লিখেন, গর্বের সঙ্গে ‘তুমি কে আমি কে/রাজাকার রাজাকার’ বলে পরিচয় দেওয়ার পর এদের আর কিছুতেই ছাড় দেওয়া যায় না। এখন এই রাতেই আমরা রাস্তায় নামতে চাই। কারা আছেন?’ এর পর বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে অভিন্ন আহ্বান জানাতে থাকে আহত ক্ষুব্ধ মানুষ।

শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক প্রতিবাদকারী এসে উপস্থিত হয়েছেন। ‘একাত্তরের শক্তি’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়ে চার রাস্তার মোড়ে কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা। তাদের সম্মিলিত কণ্ঠে ‘তুমি কে আমি কে/বাঙালি বাঙালি’, ‘আমাদের ধমণীতে/ শহীদের রক্ত’, একাত্তরের রাজাকার/ এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, ‘ছদ্মবেশী রাজাকার/এই মুহূর্তে ক্যাম্পাস ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ। প্রতিবাদকারীরা ফুলের পাপড়ি দিয়ে সড়কের ওপর ‘জয় বাংলা’ লিখে এর সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া জাতীয় সংগীতের প্রধান কণ্ঠ বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, অন্য অনেক কিছুই মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ‘রাজাকার’ মেনে নেওয়া যায় না। এই বিভ্রান্তদের পথ দেখাতেই আমরা এখানে জাতীয় সংগীত গাইলাম।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রাজিব পোদ্দার তিনি বলেন, আমি ফেসবুকে পোস্ট দেখা মাত্রই শাহবাগের দিকে রওনা করেছি। কারণ রাজাকারদের হাতে আমরা দেশ তুলে দিতে পারি না। ‘একাত্তরের শক্তি’ দুপুরের দিকে আবারও শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদী বিভিন্ন ব্যানার প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।

এদিকে, একই ঘটনায় মাঠে না নামলেও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দিনভর। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ফেসবুকে নিজের রণাঙ্গনের ছবি শেয়ার করে লেখেন: তুমি কে আমি কে/ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।’ পরে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা তো সবার জন্য যুদ্ধ করেছি। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যুদ্ধ করেছি। যারা রাজাকার স্লোগান দিল তারাও তো আমাদের সন্তান। আমরা তাদের ভবিষ্যতের কথাও ভেবেছি। কিন্তু আজ ওদের মধ্যে কী করে এমন হীনম্মন্যতা ঢুকে গেল! খুব কষ্ট হচ্ছে। যাতনা হচ্ছে ভেতরে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ও কিছুটা সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এত বছর দলটি রাষ্ট্র পরিচালনা করল, তারাইবা কী করল? কী করে আজ  প্রকাশ্যে রাজাকার স্লোগান উঠতে পারে?  প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিবৃতিতে প্রতিবাদ ॥ বিবৃতির মাধ্যমেও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রাজাকার’ স্লোগানের তীব্র বিরোধিতা করে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিশিষ্ট ২৪ নাগরিকসহ অনেকেই কোটা বিরোধী অংশের বিকৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, রবিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল থেকে ‘তুমি  কে আমি  কে, রাজাকার রাজাকার’ ও ‘আমরা সবাই রাজাকার’ স্লোগানে শুনে আমরা  বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ  হয়েছি।

বাঙালি জাতিসত্তার লালন, জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার এবং উদার সংস্কৃতিচর্চার তীর্থভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী রাজাকারদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে এমন স্লোগান উচ্চারিত হওয়ায় আমরা যারপরনাই ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ  হয়েছি। আমরা মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার আদর্শকে অবমাননা করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বহন করবার অধিকার কারও নেই।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ জুন হাইকোর্ট এই মর্মে নির্দেশনা দেন যে, কোটাপদ্ধতি বাতিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরপর থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি লক্ষ্য করেছে, এই আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে অপমান-অপদস্ত করছে।

শুধু তাই নয়, রবিবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার দাবি করার যে উদগ্র বাসনার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়,  পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেই সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে নাগরিক নানা সুযোগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটাপদ্ধতি চালু আছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে কোটাব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। সেখানে চার ধরনের নাগরিকদের জন্য মোট ৪৯.৫ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। নেপালের সংবিধানে দলিত, আদিবাসী, নারীসহ অন্যান্য নাগরিকদের জন্য ৫৫ শতাংশ সাধারণ কোটা এবং ৪৫ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা চালু আছে।

পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে ৯২.৫ শতাংশ কোটা বিভিন্ন প্রদেশের জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোটা নীতির (অভভরৎসধঃরাব অপঃরড়হ চষধহ) আওতায় কেবল শিক্ষালাভ বা সরকারি চাকরিতেই নয়, বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানেও কৃষ্ণবর্ণ, হিস্পানিক জাতি ও আদিবাসীদের জন্য  কোটা ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে।  যে কোনো সভ্য রাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন যুক্তিতে আন্দোলনকারীরা  কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে, তা আমাদের  বোধগম্য নয়।

তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মনে করে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা যেতে পারে, কিন্তু  কোনোভাবেই বাতিল করা যাবে না। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের বীর শহীদদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য দিচ্ছে, নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিচ্ছে, তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করছে। তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক আবেদ খান, শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, পদ্মশ্রী সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান প্রমুখ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আহ্্কাম উল্লাহ্্ সোমবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিলে ‘আমরা সবাই রাজাকার’ ও ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান প্রদান করার ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও হতবাক।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের কন্ঠে ‘আমরা সবাই রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান শুনে আমরা বিস্মিত, হতবাক ও ক্ষুব্ধ।

সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ কয়েকজন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ‘রাজাকার’ স্লোগানের বিরুদ্ধে  কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কোটা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগান নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, রবিবার রাতে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের পক্ষে স্লোগান রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রবিবার রাতে যে ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান। একইসঙ্গে সেখানে সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলাম, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে, তা স্পষ্ট।

হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা ঢুকেছে। তাদের পরিকল্পিত কিছু মানুষ সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা যা বলেছিলাম, রবিবার তারা তা স্পষ্ট করেছে। কালকের যেসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয় এটি কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাইরে থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে।

সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। আমরা কোনো রাজনৈতিক অপশক্তিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেব না।

তিনি বলেন, সরকার স্পষ্ট করে বলেছে আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। আদালত যেভাবে নিষ্পত্তি করবেন, সরকারকে সেভাবে কাজ করতে হবে, এটি স্পষ্ট। যারা সংবিধান জানেন, দেশের আইন জানেন, আপনারা সবাই জানেন- এটি স্পষ্ট। এরপরও এ ধরনের স্লোগান দেওয়া এবং আন্দোলন করা এবং কালকের স্লোগান, কালকের বক্তব্য একেবারে দিবালোকের মতো স্পষ্ট করে দিয়েছে এর মধ্যে রাজনীতি ঢুকেছে।

এদিকে, ফেসবুকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি লিখেন, যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করবার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লেখেন, যাদের মুখ থেকে বের হয়, ‘আমি রাজাকার’Ñ তারা প্রমাণ করছে তারা এ-যুগের ‘সাচ্চা’ রাজাকার! এরা আদালত মানে না, দেশ মানে না, সরকারও মানে না, সুতরাং, এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব না! সঠিক স্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা!

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক পোস্টে লেখেন, ‘যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি ছিল এবং আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আজকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যলয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার। নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলে-মেয়েদের লজ্জা হলো না? এই রাজাকাররা যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গণহত্যা চালিয়েছিল, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের রাজাকারদের সহায়তায় হত্যা করা হয়েছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দেয়। লজ্জা লাগে না? নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তিনটি পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। একটি পোস্টে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?

অপর দুটি পোস্টে দুটি ফটোকার্ড যুক্ত করেন তিনি। একটিতে লেখা আছে, ‘তুমি কে? আমি কে?/বাঙালি, বাঙালি।/তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।’ আরেকটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা দানব ইয়াহিয়া খানের পোস্টার শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘একাত্তরের হাতিয়ার/গর্জে উঠুক আরেকবার/তোরা যারা রাজাকার/এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’

একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাঁদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যারা করছে তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন। তার শেয়ার করা আরেকটি পোস্টে বলা হয়, এমন ভাবে স্লোগান দিচ্ছে যেন আমরা জানতাম না ওরা রাজাকারের বংশধর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর