পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে মাস্টার প্ল্যান তৈরিসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আদলে সাজাতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় পতেঙ্গা ও পারকিসহ জেলার সকল সমুদ্র সৈকতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটন উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সমন্বয় বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহার আগেই সৈকতে অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সৈকতে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে। সৈকতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যাপ্ত বাতি স্থাপন ও শৌচাগার নির্মাণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত তদারকি করার জন্যেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে খাবারের মূল্য তালিকা প্রদর্শন, নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা, খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সহায়তায় খাবার দোকানিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সৈকত হতে ঘোড়াসহ সকল গাড়ি অপসারণ এবং সী সাইড হতে সকল দোকান কান্ট্রি সাইডে নির্দিষ্ট পরিমাপের করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে ১৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো– ঈদুল আযহার পূর্বে সী সাইড থেকে সরিয়ে কান্ট্রি সাইডে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি দেয়া নির্দিষ্ট মাপ অনুয়ায়ী দোকান ঘর তৈরি করতে হবে। বীচ এলাকায় বরাদ্দকৃত দোকানগুলোতে অবশ্যই মান সম্মত খাবার পরিবেশন করতে হবে। বীচ এলাকায় বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানদারকে নিজ খরচে অস্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করতে হবে। বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যটকদের সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মাণ করা। বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনয়ন।
বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী/অস্থায়ী অফিস স্থাপন করতে হবে। সমুদ্র সৈকতের জন্য মাস্টার প্লান তৈরি করতে হবে। মাস্টার প্লান বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত সৈকতের দোকানসমূহ সুশৃক্সখল ও পুনর্বাসন করতে হবে। বীচ এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ইউনিফর্মধারী সেবক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় যথাযথ সেবা প্রদানের জন্য গাড়ি পার্কিং, বিভিন্ন সেবা গুলোকে জোন ভিত্তিতে ভাগ করতে হবে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আদলে সাজাতে হবে। বীচের গেজেটভুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অবৈধ দখলদারদের পুনর্বাসন পূর্বক উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধাদির ব্যবস্থাসহ সৈকতের সার্বিক উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনাসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য সৈকতে এক্সক্লুসিভ জোন নির্ধারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পর্যাপ্ত টয়লেট, শৌচাগার, চেন্িজং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের ব্যবস্থ গ্রহণ করতে হবে।
বীচ এলাকায় ফটোগ্রাফারসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীদের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ, সাময়িক পরিচয়পত্র প্রদান, সেবা মূল্য নির্ধারণ এবং এক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। বীচ এলাকায় খাবারের দোকানসমূহে বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে খাদ্য তালিকা প্রতিটি দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। খাবারের মান বজায় রাখতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়মিত মনিটরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নের বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য একটি উপ–কমিটি গঠন ও বীচ এলাকায় পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের শেড/অফিস নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশতিয়াক ইমন, সিএমপির কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আসিফ মাহমুদ গালিব, জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মনীষ দাশ, পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েদ, ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।