সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছেন যাত্রীরা

রিপোর্টারের নাম : / ১৯০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

পদ্মা সেতুর সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড় নেই। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আর পারাপারের জন্য ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যাত্রীরা আগের চেয়ে অর্ধেক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন।

তবে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। যদিও তা সহনীয় বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। এদিকে, টার্মিনালকেন্দ্রিক যেকোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় বাস রাখামাত্রই জরিমানা করা হচ্ছে। সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বিশ্রামাগারে। বিশ্রামাগারে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগাতেই এমন উদ্যোগ। রোববার সকাল ১০টায় বিশ্রামাগারে গিয়ে দেখা যায় মাঝ বয়সি এক যাত্রী একাধিক ব্যাগ নিয়ে খুশ মেজাজে বসে আছেন। সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে ভাব জমিয়ে নিলাম। এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম নানা বিষয় সম্পর্কে। মতিউর রহমান নামের সেই যাত্রী বলছিলেন, ‘আমি ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রামের বাড়ি যশোরে। নানা ব্যস্ততার কারণে অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয় না।

আগে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি যানজট ছাড়াও যশোর পৌঁছতে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যেত। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের ঝামেলায় পড়লে তো কথাই নেই। কমপক্ষে এক থেকে দুই দিন লেগে যেত বাড়ি পৌঁছতে। এজন্য আর বাড়ি যাওয়া হতো না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই চিত্র বদলে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিচিত অনেকের কাছ থেকে খবর নিয়েছি। আমি নিজেও খবর নিয়েছি। তারাও জানিয়েছেন, আগের চিত্র আর নেই। আগে আমরা ফেরিঘাটে গিয়ে সেখানকার লোকজনদের ডাকতাম। কোনো কোনো সময় খুবই অনুরোধ করতাম, যাতে আমাদের বহনকারী যানবাহন দ্রম্নত পার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এখন সেই চিত্র আর নেই। এখন ঘাটের লোকজনই যানবাহনের চালকদের ডাকে পার করে দেওয়ার জন্য। ভাবতেই ভালো লাগছে।’ তিনি বলেন, সবই হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে। এজন্য এবার আগে ছুটি নিয়েছি। হানিফ পরিবহণের টিকিট কিনেছি। দাম ৬০০ টাকা। বাড়ি যেতে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। ঈদ উপলক্ষে তার কাছ থেকে কোনো বাড়তি ভাড়া নেয়নি। তিনি আরও বলেন, যদি শেখ হাসিনা বেঁচে থাকে তাহলে অবশ্যই একদিন দৌলতদিয়াসহ সব জায়গায় ব্রিজ হবে। প্রধানমন্ত্রী সে রকম মানসিকতা পোষণ করেন।

তখন যাতায়াত আরও সুবিধা হবে। হানিফ বাস কাউন্টারের ম্যানেজার নোমান আহমেদ বলেন, আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত তাদের প্রায় সব বাসের টিকিট বিক্রি শেষ। আগামী ২-৩ দিন টিকিট পাওয়া যাবে। চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, পাবনাসহ ৪-৫টি জেলায় তাদের বাস যাতায়াত করে না। তাছাড়া দেশের সব জেলায় তাদের বাস যাতায়াত করে। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। পুরনো তালিকা মেনে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে ঈদের ২ থেকে ৩ দিন আগে ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হতে পারে। তবে সে বিষয়ে এখনো মালিক পক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনি আরও জানান, টার্মিনালের ভেতরে অন্তত ৫০০ কাউন্টার আছে। সচল রয়েছে দেড় শতাধিক। বাকিগুলো বন্ধ। এরমধ্যে একই কোম্পানির একাধিক কাউন্টার আছে। আর গাবতলীসহ আশপাশের এলাকা মিলে বাস কাউন্টারের সংখ্যা কম করে হলেও দুই হাজার। তবে সেগুলো টার্মিনালের কাউন্টার হিসেবে ধরা হয় না। এস পি পরিবহণের বাস কাউন্টারের সামনে ঝুলতে দেখা যায় গত বছরের ভাড়ার তালিকা। কাউন্টারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা কোনো ধরনের বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। কাউন্টারটি থেকে টিকিট কেনা রিয়াজ মোলস্না বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি হওয়ায় বাচ্চাদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আমাদের বাড়ি যশোর শহরে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য অন্য সময় ৫৫০ টাকা। ঈদের জন্য ৭০০ টাকা করে নিয়েছে। তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে আমরা আরামে বাড়ি যেতে পারছি। আগে গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের চাপে বসার জায়গা পাওয়া যেত না। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অনেক কাউন্টার ঘুরে শুধু সোহাগ পরিবহণের সামনে নতুন ভাড়ার তালিকা টানানো দেখা গেছে। কাউন্টারের ম্যানেজার ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর টিকিট বেচাকেনা করি। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে আপনি টিকিট বুকিং দিতে পারবেন। আবার দেশের যেকোনো কাউন্টার থেকে আপনি আপনার যাত্রা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। নেটওয়ার্ক সিস্টেম পুরোপুরি আধুনিক করা হয়েছে।

বাড়তি ভাড়া না নেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে এই তালিকা টানানো হয়েছে। মূলত সহজেই যাতে যাত্রীদের চোখে পড়ে এজন্য। তবে এসি ও নন এসি বাসের টিকিটের দামের পার্থক্য আছে। বাড়তি ভাড়া আদায় সম্পর্কে একজন বাসচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, নেহায়েত কোনো প্রয়োজন না হলে তারা আর ফিরছেন না। এজন্য পুরো বাসটি গন্তব্য থেকে গাবতলীতে অনেকটা খালি আসছে। যাত্রীসহ একটি বাস গাবতলী থেকে খুলনা যেতে ১৫০ থেকে ১৬০ লিটার ডিজেল লাগে। আসার সময়ও ডিজেলের খরচ প্রায় সমান। অথচ আসার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। সেটি পুষিয়ে নিতেই অনেক বাস মালিক ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পাম্পে ঈদ বকশিশ হিসেবে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম রাখছে ১০০ টাকা। যা মূল দামের চেয়ে বেশি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও অনেক বাস মালিক ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে সব বাস কোম্পানি সেটি করে না। এদিকে, যাত্রীদের কাছে সবচেয়ে বেশি চমক সৃষ্টি করেছে গাবতলী বাস টার্মিনালের বিশ্রামাগারটি। বিশ্রামাগারে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা বলছিলেন, আগে এটি একেবারেই নোংরা ছিল। বিশ্রামাগারের সঙ্গে কোনো টয়লেট ছিল না। এখন সেই চিত্র আর নেই। যা সত্যিই খুব আনন্দের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেও আর খারাপ লাগে না। গাবতলী বাস টার্মিনালে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, বিশ্রামাগারটি ব্যবহারের যোগ্য করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুর রহমান কড়া নির্দেশ জারি করেন। কড়া নির্দেশের পর বিশ্রামাগারটি পুরোপুরি পরিপাটি করা হয়। বসানো হয়েছে নতুন সোফা। বিশ্রামাগারের উত্তর দিকে মহিলাদের নামাজের জায়গা করা হয়েছে। আর বিশ্রামাগারের একটি অংশ আলাদা করে সেখানে আধুনিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের জন্য বানানো হয়েছে একাধিক বাথরুম। এসব মেইনটেইন করার জন্য লোক রাখা হয়েছে। বাথরুম লিজ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহারভেদে জনপ্রতি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ ও ১০ টাকা। বিশ্রামাগারে বসানো হয়েছে বড় বড় ৩টি নতুন উন্নত এসি। বিশ্রামাগারটির দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে ছোট একটি রুম গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে রাখা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা ছবি।

ছবির নিচে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা রয়েছে। সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা বলেন, এটি করা হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে। অনেক সময়ই যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। এই অলস সময়ে যাতে যাত্রীদের বঙ্গবন্ধু কর্নার নজর কাড়তে পারে, মূলত সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এটি করা। অনেকে জানার আগ্রহ থেকেও বা নিতান্তই দেখার ছলে হলেও যাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারেন তারই প্রচেষ্টা মাত্র। মূলত শিশু কিশোরদের টার্গেট করেই বঙ্গবন্ধুর কর্নারটি করা হয়েছে। কারণ শিশু-কিশোরদের জানার বা দেখার আগ্রহ বেশি থাকে। এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের মূল গেটে স্থাপন করা হয়েছে দুইটি কন্ট্রোলরুম। যার একটিতে সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। অপরটি সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণ করছে। পুরো টার্মিনালে পুলিশের তরফ থেকে সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘অপরিচিত কারোর দেওয়া কোনো কিছু খাবেন না। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলে কন্ট্রোলরুমে পুলিশকে অভিযোগ করুন।’ ব্যানারে যাত্রীদের ‘যাত্রা শুভ হউক’ লেখা রয়েছে। মূল গেটে বসানো হয়েছে পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার। রোববার সকাল থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ সেখানে উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বিক দিক নজর রাখছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের তরফ থেকে টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় গাড়ি রাখলেই জেল-জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। দুপুরে একটি বাস যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করায় তাকে নগদ জরিমানা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন কাউন্টারে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর