পার্সপোট অফিসের দুর্নীতির কারণে ডাক্তারি সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ

লালমনিরহাটে একমাত্র আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালালে ভরপুর। ওই অফিসের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা জটিল কঠিন রোগে ডাক্তারী সেবাসহ বিভিন্ন কাজে যোগদান করতে পাচ্ছে না।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা ষ্টেডিয়াম রোডস্থ এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি অবস্থিত। ওই অফিসের একজন অফিস সহায়তাক বাবুল (৩৮)। তিনি উক্ত অফিসে ২০১৩ সালে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে গোপনে পাসপোর্ট প্রত্যাশিদের ভুল-ভাল বুঝি অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালালদের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘুষ গ্রহণ করছেন।
এমন একজন ঘুষ প্রদানকারী হাসিবুর রহমান (হাসান)। তিনি লালমনিরহাট শহরের বাসিন্দা ও একজন পাসপোর্ট প্রত্যাশি। পাসপোর্ট প্রয়োজনে লালমনিরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে পরিচয় হয় ওই অফিসের অফিস সহায়তাক বাবুল’র সাথে। তখন হাসানের পাসপোর্ট করতে বাবলু’র সাথে চুক্তি হয় ৪০ হাজার টাকা। সেই টাকার বিনিময় ৫ দিনের মধ্যে হাসানকে পাসপোর্ট করে দিবেন বাবলু। চুক্তি মোতাবেক (২৬ অক্টোবর) হাসান বাবলু’র মোবাইল নগদ (০১৯৪৭৩২৩০১৩) নম্বরে প্রথমে ৩৫ হাজার, তারপর ৫ হাজার টাকা নেন। সেই টাকা আদান-প্রদানের প্রমাণাধি এ প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষণ রয়েছে।
৪০ হাজার টাকা নিয়ে দু’দিন পর হাসানকে দু’টি মোবাইল নম্বর দিয়ে পাঠিয়ে দেন রাজধানী ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে। সেখানে ধন্য দিয়ে পাসপোর্ট না পেয়ে হাসান বাবুলকে ফোন দিলে আর ফোন ধরেন না। এভাবে ঢাকা পাসপোর্ট আর লালমনিরহাট পাসপোর্ট অফিসে দফায় দফায় ঘুরাফেরা করলেও আজও মেলেনি হাসানের ভাগ্য সেই পাসপোর্ট। নেই ঘুষের টাকার কোন খবর।
ওই নম্বর দু’টি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ঢাকা পাসপোর্ট অফিস বাবুলের দালাল চক্রের সদস্য। বাবুলের শুধু একজন মাধ্যম নয়, পুরো লালমনিরহাট জুড়ে রয়েছে বিশাল প্রতারক সিন্ডিকেট। ঢাকা অফিসে আছে তার দালাল। শুধু হাসান নয়, এ রকম অনেক অসহায় হাসান আছেন, যারা পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক বাবুল প্রতারনার শিকার হয়েছেন।
হাসিবুর রহমান হাসান বলেন, আমার জরুরী পাসপোর্টের প্রয়োজন। তাই পাসপোর্ট অফিসে গেলে, অফিস সহায়ক বাবলু ৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দিবে। তার বিনিময় ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন। তখন ভাবলাম, চিকিৎসা করার জন্য যাবো, তাই রাজি হয়ে গেলাম। দু’দফায় মোবাইলের নগদ নম্বরে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা যাতায়াত দু’বার করেছি। সেখানে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বাবুলকে বার বার ফোন দিলেও বাবলু আর ফোন ধরেন না। আজও মেলেনি আমার সেই পাসপোর্ট। আমি ওই প্রতারক বাবুলের বিচার দাবি করছি।
অপর পাসপোর্ট প্রত্যাশি আরশাদ মাহমুদ হাসান (লাল) বলেন, আমি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছি। অনেক দিন হল, পাসপোর্ট করতে দিয়েছি, কিন্তু এখনো পেলাম না। বাবুল আজ-কাল করছে, এভাবে আর ঘুরবো কতদিন। মোটা অংকের টাকা না দেয়ায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছি।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক বাবুল টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পাসপোর্টের কাজটি করার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। শুধু ৫০ হাজার নয়, কিছু কিছু পাসপোর্ট আছে, যা “এক লাখ” টাকাও খরচ নেয়া হয়। আমি কাজ করি, তাই আমার ভুল হতে পারে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, পাসপোর্ট বিষয়ে কোন অবৈধ লেনদেনের সুযোগ নেই। অফিসের কেউ অবৈধ লেনদেন করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।