বেড়াবিহীন ৭৪ কিঃমিঃ সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায়! ঈদকে ঘিরে ভারতীয় গরুতে সয়লাব হাট-বাজার!
সীমান্তবর্তী একটি জেলা নাম লালমনিরহাট। যার ২৫.৪৮ ডিগ্রি থেকে ২৬.২৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৮ ডিগ্রি থেকে ৮৯.৩৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে জেলাটির অবস্থান। এ জেলার উত্তরে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা, দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের কোচবিহার জেলা এবং পশ্চিমে রংপুর ও নীলফামারী জেলা।
জেলাটি ঘিরে রয়েছে কয়েকটি নদ-নদী। যার উত্তরে ধরলা ও দক্ষিনে তিস্তা নদী। সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়াবিহীন ৭৪ কিঃমিঃ রয়েছে উম্মুক্ত। ফলে সীমান্তে উন্মুক্ত থাকায় এই দূর্বলাতার সুযোগ নিয়ে কোরবানির ঈদকে ঘিরে ভারতীয় গরু পাচারকারীরা বেপোরয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু হাট-বাজারে দেশী গরুর সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলা ঘিরে সর্বমোট ২৮৫ কিঃ মিঃ ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের মধ্যে প্রায় ৭৪ কিঃমিঃ কাঁটাতারের বেড়াবিহীন অবস্থায় রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্তগুলো দহগ্রাম, দৈইখাওয়া, কালীগঞ্জ, চাপারহাট, গোড়ল, কুটিয়ামঙ্গল, দূর্গাপুর ও মোগলহাট। এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে ভারতীয় গরু।
এসব ভারতীয় গরুর বেশির ভাগ ধরলা নদী দিয়ে নৌ-পথে কাঁঠালবাড়ি ও বড়বাড়ি হাটে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও জেলার সপ্তাহে শনিবার-বুধবার কালীগঞ্জের শিয়াল খোওয়াহাট, হাতীবান্ধার চামটারহাট, শুক্রবার-সোমবার চাপারহাট, শনিবার-মঙ্গলবার দূরাকুটিহাটে শতশত ভারতীয় গরু চোরাই পথে এনে দেশি গরুর সাথে মিশিয়ে বিক্রি করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে প্রকাশ্য ট্রাকভর্তি করে পাচার করা হচ্ছে।
একটি সুত্র জানান, লালমনিরহাট ২৮৫ কিঃমিঃ সীমান্তে ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবি দায়িত্ব পালন করে আসছে। সীমান্তে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে পৃথক পৃথক তিনটি ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছে। আইন শৃংখলা বাহিনী তল্লাশীতে গিয়ে হাটের স্লীপ দেখে ফিরে আসে। প্রকৃত অর্থে এটা অযুহাত মাত্র। এক জোড়া ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসলে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী, অন্যান্য বাহিনী, রাজনৈতিক কর্তাগণ রেসিও অনুয়ায়ী অর্থ পেয়ে থাকে। এই গরুর অবৈধ অর্থের কারণে সীমান্তবর্তী সংলগ্ন হাটের ইজারাদার ও চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে গরু ব্যবসার পাশাপশি হুন্ডির ব্যবসা করছে। কিন্তু মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়না। রহস্যজনক কারণে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যগণও কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এভাবে চোরাইপথে গরু আসলে দেশী খামারে লালন-পালন করা গরুর খামারিরা লোকসানে পড়তে হবে।
এদিকে বেশ কয়েকটি সীমান্ত ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় কৃষি কাজের নাম করে ভারতীয়রা যেমন বাংলাদেশে অবাদে প্রবেশ করছেন তেমনি বাংলাদেশীরাও ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছেন। এসব লোকজনের অনেকের রয়েছে দু’দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র। মাদক ব্যবসায়ীরা দুই দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে অরক্ষিত সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে গিয়ে অবস্থান করছে। আর এভাবেই চলছে সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত। ফলে সরকারকে কঠোর হস্তে ভারতীয় গরু পাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে দাবী খামারিগণের।