শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোনাবাড়ীতে হকার্স মার্কেটে অগ্নি কাণ্ডে ৯ দোকান পুড়ে ছাই বিশ্ব ইজতেমায় বয়ান শুনে ধ্যানে মগ্ন মুসল্লিরা সলঙ্গায় অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায় টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় এক মুসল্লীর মৃত্যু কোনাবাড়ীতে হোটেল হ্যাভেন ফ্রেসে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা গাজীপুরে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ নারী মাদককারবারি গ্রেপ্তার গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিংয়ে বশেমুরকৃবি’র প্রথম স্থান অর্জন উৎসব ও বিশ্বদ্যিালয় দিবস উদযাপন ১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতার পর জাতির জন্য ভালো কিছু হয়নি তাতে একমত হবো না” ডাঃ শফিকুর রহমান কুড়িগ্রামে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান- ১টির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ

মিয়ানমারকে কঠোর হুঁশিয়ারি

রিপোর্টারের নাম : / ১২৮ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববারও মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এর আগে শুক্রবার উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকার সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক ইকবাল নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাতে রোববার সকালে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নাজমুল হুদার দপ্তরে তলব করা হয়। প্রায় আধঘণ্টা বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপে বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে শান্তিপূর্ণ সহায়ক পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু সেখানকার গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে রাজি হবে না।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৈঠকে রাষ্ট্রদূতকে এককাপ চাও দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। আপ্যায়ন না করার অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশ এ বিষয়ে চরম অখুশি।’

অন্যদিকে, যেকোনো কূটনীতিককে আপ্যায়ন করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাধারণ একটি প্রথা বা রেওয়াজ। আপ্যায়নের মাধ্যমে কূটনীতিক হৃদ্যতার বিষয়টিও বোঝা যায়। সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে চলমান ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। গত এক মাসের মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চার দফা তলব করে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় রীতিমতো বিরক্ত বাংলাদেশ। তার বহিঃপ্রকাশই যেন ঘটল রোববার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চতুর্থবারের মতো ডাকার ঘটনায়।

এর আগে গত ২০, ২৮ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল বাংলাদেশে এসে পড়ে। সে কারণে ২১, ২৯ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে এ নিয়ে চারবার সীমান্তের ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলো। অবশ্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, আরাকান বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে। ওই সংঘাতে ব্যবহৃত মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ছে।

এদিকে, রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে তার দপ্তরে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমানায় মিয়ানমারের মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনা মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ভুলক্রমে ঘটেছে নাকি উসকানিমূলক, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এ ঘটনায় শুরুতেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে জবাব চেয়েছিল এবং এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল উলেস্নখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন মিয়ানমার জানিয়েছিল মর্টারশেল ভুলক্রমে বাংলাদেশের সীমানায় গিয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে তারা সতর্ক থাকবেন বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন। আবারও একই ঘটনা ঘটায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখছে।’

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে কোনো রোহিঙ্গা বা সে দেশের কোনো লোককেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বান্দরবান ও কক্সবাজারে কর্মরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে, যাতে অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা না ঘটে।

রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখায় পড়ে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃতু্য এবং আরও কয়েকজন আহতের ঘটনায় মিয়ানমারকে কড়া জবাব দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আর একজন রোহিঙ্গাকেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। বর্ডারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট মনোবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে।’

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে কাউকে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। বিজিবি সতর্কবস্থায় আছে। স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তায় আমরা নিয়োজিত। তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রম্ন সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে কোনাকখাল এলাকায় ফের তিনটি মর্টারশেলের গোলা এসে পড়েছিল শুক্রবার রাত আটটায়। সীমান্তের এপারে এসে পড়েছিল ভারী অস্ত্রের গুলিও। ওই রাতে সীমান্ত এলাকার মিয়ামনারের আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গা শিশুসহ চার জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর মো. ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গার মৃতু্য হয়। আহতদের অবস্থাও গুরুতর। তারা কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমার সরকার বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ বিমান, ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে গোলাগুলি এবং গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ কারণে ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম-তুমব্রম্ন, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় সীমান্তের বাসিন্দাদের অনেকেই পাশের এলাকায় আত্মীয় স্বজনদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। জিরো লাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার পর আতঙ্কে বন্ধ করে দেওয়া হয় তুমব্রম্ন বাজারের সব দোকানপাট।

এ অবস্থায় নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢোকার আশঙ্কা করা হলেও সরকার কঠোরভাবে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। কঠোর অবস্থানে রয়েছে সীমান্ত ও নৌপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তথ্য এসেছে, এরমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর মধ্যে দুটি যুদ্ধ বিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকেও গোলা নিক্ষেপ করে দেশটি।

গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে ?মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হন উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক তরুণ। এরপর রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল এসে পড়ে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কোনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেটির বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হ?ন। এতে আহত হন আরও পাঁচ জন। একদিনে এই দুই ঘটনার পর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর