বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

যৌতুক না পেয়ে বিয়ের ৫ মাসেই তালাক! কাজী নকল না দেয়ায় দেনমোহর বঞ্চিত কিশোরীবধূ

রিপোর্টারের নাম : / ১০৩ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় বিয়ের ৫ মাসেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী রাজু মিয়ার বিরুদ্ধে। ৪ ডিসেম্বর তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করে ফেরত পাঠান স্ত্রী রুপালী খাতুন (১৩)।

এদিকে, রুপালী-রাজু’র বিয়ে সম্পন্ন করে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) কাবিননামা না দেওয়ায় দেনমোহরের অধিকার বঞ্চিতের শঙ্কায় পড়েছে রুপালীর পরিবার।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী রুপালী খাতুন। প্রায় ৫ মাস পূর্বে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া এলাকার আউয়াল মিয়ার ছেলে রাজু মিয়ার সাথে। কথা হয় বিয়ের একবছর পর জামাইকে যৌতুক বাবদ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্ত মাস না পেরোতেই স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে টাকার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিতে থাকে রাজু। একপর্যায়ে বিয়ের ৫ মাসেও সেই টাকা না পেয়ে গত ২৪ নভেম্বর স্ত্রী রুপালীকে তালাকের নোটিশ পাঠায় স্বামী রাজু মিয়া।

রুপালীর বাবা আমিনুল হক বলেন, ঘটক জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব দেন ছেলের বাবা আউয়াল মিয়া। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় প্রথমে আমি রাজি হইনি। তখন ছেলের বাবা বলে, আমার পরিচিত কাজী আছে সমস্যা হবে না। রেজিস্ট্রীর দায়িত্ব আমার, শুধু কোনও ঢাকঢোল করা যাবে না। পরে ৮০ হাজার টাকা যৌতুকে বিয়ে ঠিক হয়। যা এক বছরের মধ্যে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিয়ের দিন দুপুর বেলা ছাবেরা খাতুন স্কুলের মৌলভী শিক্ষক কাজী ওমরকে সাথে নিয়ে ছেলে-ছেলের বাবা ও ঘটক জাহাঙ্গীর আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর আড়াই লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে রেজিস্ট্রী ও পড়ান করে কাজী ওমর।

রুপালীর বাবা বলেন, বিয়ের পর থেকেই টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে ছেলে ও ছেলের বাবা। টাকা না দেওয়ায় একমাস পর মেয়েকে বাড়িতে রেখে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এর আগেও ছেলের বিয়ে ও তালাক হয়েছিল। এখন আমার মেয়েকেও তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছে। রুপালীর বাবা আরও বলেন, আইনী ব্যবস্থা নিতে বিয়ের কাগজের জন্য কাজী ওমরের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্ত মেয়ের বয়স ১৮ পূরণ না হলে কাজী কোনও কাগজ দিতে পারবেন না বলে জানায়। এখন আমার মেয়ের কি হবে? জানিনা।

ছেলের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, যৌতুক নয় মেয়ের সাথে বনিবনতা না হওয়ায় ছেলে তালাক দিয়েছে। আমরা দেনমোহর বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। মেয়েপক্ষ আপোষে বসলে আমরা টাকা দিব। তিনি আরো বলেন, কাজী ওমর আমার ছেলের আগের বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রী করেছে, সে কারণে তাকে ডেকেছি। তিনি এ বিয়ের জন্য ৩ হাজার টাকা চেয়েছেন, আমরা আড়াই হাজার দিয়েছি।

ছেলের বাবা আরও বলেন, কবিননামার জন্য আমরাও কাজীর কাছে গিয়েছি। তবে মেয়ের বয়স পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাগজ দিবেন না বলে জানান তিনি।

দুর্গাপুর ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক ও মোগলহাট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) ওমর বলেন, রাজুর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ের তালাক আমার মাধ্যমে হয়েছে। তবে রুপালীর বিয়ে রেজিস্ট্রী ও পড়ানের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র সাহা বলেন, আমার স্কুলের মৌলভী শিক্ষক একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) আমি জানি, তবে বিয়ের বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্হা নিব।

এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, এধরনের কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর