বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
অনবদ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ম্যানগ্রোভ হ্যাকাথনের ফাইনাল কাজিপুরে রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত, ৬ জনের অর্থদন্ড  উল্লাপাড়ায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক সুজানগরে ইউএনওর কক্ষে জামায়াত নেতাদের মারধর করলেন বিএনপির নেতারা যশোরের শার্শা মূল্য তালিকা না থাকায়’৪ দোকানদার কে জরিমানা ভাঙ্গুড়ায় মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন গন অধিকার পরিষদের ভালুকায় পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারার জের ধরে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে মারধর  দূর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর গাজীপুর নগরীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেবিল হান্ট অভিযানে গ্রেফতার-৫৮ ভাঙ্গুড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

রেমিট্যান্স আসায় শীর্ষে ঢাকা

রিপোর্টারের নাম : / ১২১ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২

জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তাছাড়া সব বিভাগের মধ্যেও ঢাকা শীর্ষে। প্রতি বছর দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের ৪৭-৪৮ শতাংশই আসছে এ বিভাগের মাধ্যমে। আবার সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসে ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমে। এছাড়া সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আনছে বান্দরবান ও লালমনিরহাট জেলা।

অপরদিকে দেশের বাইরে রেমিট্যান্স যাওয়া দেশের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে ভারত। গত অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স গেছে ভারতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ। আবার এই দুই বিভাগের সদর দুই জেলা চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ঢাকা বিভাগের কুমিল্লা জেলা রেমিট্যান্স আনায় প্রায় সমানতালে এগিয়ে রয়েছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ২০২০ সালে প্রবাসে শ্রমিক পাঠানো প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়। তবে ২০২১ সাল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তথ্য মতে, ২০২০ সালে বিদেশ যান মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ২৬৯ জন। তবে ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন বিদেশে গেছেন। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন আরো ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫১৮ জন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯১ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ লাখ ৪ হাজার তথা প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ বিদেশ গিয়েছেন ১০টি জেলা থেকে। বাকি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ প্রবাসী হয়েছেন বাকি জেলাগুলো থেকে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা জেলা। এখান থেকে গত ১৫ বছরে ৯ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এই জেলার মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৯ কোটি ৫৬ লাখ রেমিট্যান্স আসে। আগের অর্থবছরে এই জেলার মাধ্যমে এসেছিল ১৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

শ্রমিক কর্মসংস্থানে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল চট্টগ্রাম। এ জেলা থেকে ৭ লাখ ২৬ হাজার মানুষ প্রবাসে গেছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই জেলার মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছিল ১২১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ১৩৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

একইভাবে ২০০৫ থেকে ২০২০ সালে ঢাকা থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার শ্রমিক বিদেশ যান। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক যাওয়ায় ঢাকার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। অথচ এই জেলার মাধ্যমেই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসছে প্রতি বছর। বিদেশে ৪ লাখ ৯৩ হাজার শ্রমিক পাঠিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

২০২০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল থেকে ৪ লাখ ৪৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছেন। দেশটি থেকে শ্রমিক যাওয়ায় টাঙ্গাইল চার নম্বরে থাকলে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৪৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ১০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। বিদেশে জনশক্তি প্রেরণে এরপরেই আছে চাঁদপুর থেকে ৩ লাখ ৬৭ হাজার, নোয়াখালী থেকে ৩ লাখ ৪৯ হাজার, নরসিংদী থেকে ২ লাখ ৬ হাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে ২ লাখ ৫৯ হাজার ও ফেনী থেকে ২ লাখ ৩২ হাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী- দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে রেমিট্যান্স আনায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এই বিভাগের মাধ্যমে গত অর্থবছরে ৯৮৯ কোটি ৯২ লাখ রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশে আসা মোট রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৪৭ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই বিভাগের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ১২০১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এটি ওই অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় সাড়ে ৪৮ শতাংশ।

রেমিট্যান্স আনায় এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বিভাগের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৫৪১ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৬২২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে খুলনা বিভাগের মাধ্যমে ৯৯ কোটি ডলার, বরিশাল বিভাগের মাধ্যমে ৫৫ কোটি ডলার, রাজশাহী বিভাগের মাধ্যমে ৮৯ কোটি ডলার, রংপুর বিভাগের মাধ্যমে ৬৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার ও ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমে ৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী- প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও বিপরীত চিত্র দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া রেমিট্যান্স প্রবাহে। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যেসব বিদেশি কাজ করেন তারা গত অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বেশি অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন।

তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে কর্মরত বিদেশিরা ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ নিজ দেশে পাঠান। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। আর এই টাকা পাঠানোর শীর্ষে ভারতীয়রা। গত অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স গেছে ভারতে, যা দেশের বাইরে যাওয়া রেমিট্যান্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এই রেমিট্যান্সের অঙ্ক বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক কম। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর রেমিট্যান্স আকারে ভারতে যায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের বরাত দিয়ে ওসব খবরে এটাও বলা হয় যে, রেমিট্যান্স আয়ে ভারতের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ তথ্য ভুল বলে দাবি করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বেশ কয়েকটি খাতে অনেক ভারতীয় নাগরিক কাজ করেন। এ কারণেই প্রতি বছর ভারতেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্সে যায়।

রেমিট্যান্স পাঠানোয় দ্বিতীয় স্থানে আছে থাইল্যান্ডের নাগরিকরা। তারা ৮৭ লাখ ডলার দেশে পাঠায়। এরপরেই চীনের অবস্থান। চীনে যায় ৮৫ লাখ ডলার। জাপানে ৫৩ লাখ আর শ্রীলঙ্কায় ৫০ লাখ ডলার পাঠান দেশ দুটির নাগরিকরা।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। বিপুলসংখ্যক বিদেশি বিশেষত আফ্রিকানরা এ দেশে অবৈধভাবে বসবাস করেন। তাদের বড় অংশই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান। আবার ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বৈধভাবে বসবাসকারীরাও কর ফাঁকি দিতে তাদের আয়ের একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান। কতসংখ্যক বিদেশি কর্মী বৈধভাবে বাংলাদেশ কাজ করছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই।

এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, যারা এ দেশে কাজ করেন তাদের ২০ শতাংশ আয়কর দেয়া লাগে। তাই কর ফাঁকি দিতে অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করেন। তিনি বলেন, নিবন্ধনের মাধ্যমেই দেশে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে বিডাকেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর