লালমনিরহাট সীমান্তে ‘ দুই দেশের মিলন মেলা’

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট সংবাদদাতা:সীমান্তে মিলন মেলা নাম হলেও স্থানীয়দের কাছে কান্নাকাটির মেলা’ নামেই পরিচিত। পাকিস্তান আমল থেকে দু’দেশের আত্মীয়-স্বজনের ‘কান্নাকাটির মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে গঙ্গাপূজা, নদীতে পুণ্যস্নান, কুশল বিনিময়ে আবেগ-প্রবণ হয়ে পড়েন মেলায়। মেলাটি আজ রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে মালদহ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারে এমেলায় ব্যাতিক্রম চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কঠোর নজরদারিতে সীমান্তের ৯১৫ নম্বর পিলারের কাছে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সিতাই থানায় কাটাতারের বেড়ার পাশে ভেড়ভেড়ি এলাকায় মালদহ নদীর তীরে গঙ্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় দু’দেশের শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত হন। প্রতিবছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করে বুকে বুক মিলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও বিজিবি ও বিএসএফের কঠোরতায় এবার তা হয়নি। এবার সীমান্ত গেট খোলা হয়নি। কাটাতারের বেড়ার থেকে প্রায় ৩শ হাত দ্রুত বজায় রেখে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে হাত তুলে সাক্ষাত করেন। কথা হয়নি একে অপরে সাথে। ‘কান্নাকাটির মেলা’ দুঃখ কষ্ট নিয়েই বাড়ি বাড়ি ফিরেছেন স্বজনরা। স্থানীয় অতুল চন্দ্র (৫০) ও অনিল রায় (৪৮) জানান, পাকিস্তান আমল থেকে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি সীমান্তে মিলন মেলা হলেও স্থানীয়ভাবে ‘কান্নাকাটির মেলা’ নামে পরিচিত।
এবার অন্য রকম ছিল এমেলা।
দু’দেশের মানুষ অনেক দিন পর একত্রিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর চাপছিল। কাটাতারের বেড়া থেকে ৩শ হাত দ্রুত বজায় রেখে সহ
আবেগপ্রবণ হয়েছিলাম। বিগত বছরের মতো এবার একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করার কোন সুযোগ ছিল না। ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করতে ভারতীয় সীমান্তে আসা বাংলাদেশী সুরেশ চন্দ্র রায় (৬০) জানান, প্রায় একযুগ পর ২ ভাইয়ের দেখা হবে। এমনটাই ভেবে গত সারারাত ঘুমাইনি। আনন্দে ছিলাম। কিন্তু এবার মেলায় এসে আরও কষ্ট বেড়ে গেল। দুর থেকে দেখা করার থেকে না করাই ভাল ছিল। এবার কুশল বিনিময় তো দুরের কথা এবং বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেওয়ার সুযোগ ছিল না কারও।
সীমান্তে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক জানান, এবার মেলা ঠিকমতো জমেনি। কারণ এবার কারও কাছাকাছি কেউ যেতে পারেনি। ইতিপূর্বে উভয় দেশের নাগরিক মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করেছিল। বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিকরা কাঁটাতারের বেড়ার পাশে ভেড়ভেড়ি এলাকায় গঙ্গাপূজা করার পর মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করে থাকেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হলে জড়িয়ে ধরে
কান্নাকাটি করে মন হালকা করেন। এবার তার ব্যাতিক্রম ঘটেছে।
এ বিষয়ে গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে মেলাটি শেষ হয়েছে। লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি এসেছিলেন কান্নাকাটির মেলায়। কেউ কেউ এসেছিলেন মেলা দেখার জন্য। কেউ কেউ এসেছিল আত্মীয়-স্বজনের দেখা করতে। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার কারণে কেউ
কাছাকাছি যেতে পারিনি।