মালিককে খুনের পর লাশের পাশে বসেছিল কর্মচারী

চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে গেলে দেখতে পান দোকানের শার্টারের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে বাইরে আসেছে। তখন আশপাশের ডাক-চিৎকারে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন জুয়েল মাতাব্বর। তার শরীরজুড়ে রক্ত। এরপর ভেতরে ঢুকতেই মেঝেতে পাওয়া যায় শওকত মাতাব্বরের ক্ষত-বিক্ষত দেহ। শুরুতে জুয়েল বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেও পরক্ষণেই বলেন, ‘আমি মারছি, দরকার হইলে আমাকে ফাঁসি দেন।
নিহত শওকত (৪০) পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ‘ইসলামপুর প্লাজার পঞ্চম তলায় একটি প্যাকেজিং কারখানার মালিক ছিলেন। তিনি ওই কারখানাতেই কর্মচারী জুয়েলকে নিয়ে থাকতেন। গত সোমবার গভীর রাতে জুয়েল তাকে খুন করে। আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল (২৬) বলেছেন, তিনি মালিকের কাছে ২০০ টাকা চেয়েছিলেন। তা না দিয়ে উল্টো তাকে বকাঝকা করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তিনি কারখানায় থাকা ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকেন।
খুনের বিবরণ দিয়ে জুয়েল পুলিশকে আরও বলেছেন, শওকতকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তিনি দিশাহারা হয়ে যান। একপর্যায়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মার্কেটের সব গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেননি। পরে দোকানে ঢুকে শওকতের লুঙ্গি ও জামা-কাপড় দিয়ে রক্ত পরিষ্কারের চেষ্টা করেন।
ওই মার্কেটের ছয় তলার একটি দোকানের কর্মী মো. সজীব জানান, সকাল ৬টার দিকে চিৎকার-চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় তার। তখন পঞ্চম তলায় নেমে দেখেন শওকতের কারখানা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত দেখে তিনি ভয়ে মার্কেটের লোকজনকে ডাকেন। এর আধাঘণ্টা পর জুয়েল কারখানা থেকে বের হয়ে এসে বলে ‘একটা লোক এসে আমার ভাইরে মাইরা লাইছে।’ তখন তার হাত কাটা ও গেঞ্জিতে রক্ত মাখা ছিল। এরপর পুলিশে খবর দিয়ে ভেতরে গিয়ে শওকত মাতাব্বরের লাশ দেখতে পান তারা।
ওই মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস ছাত্তার জানান, শুরুতে জুয়েল দাবি করছিল, অজ্ঞাত এক লোক শওকতকে ছুরি মেরে পালিয়েছে। তবে সবাই তাকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে জুয়েলকে আটক করলে সে হত্যার কথা স্বীকার করে বলতে থাকে, ‘আমি মারছি, দরকার হলে আমাকে ফাঁসি দেন।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার জুয়েল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে দাবি করেছে, সে ২০০ টাকা চেয়েছিল। তা না দেওয়ায় তাকে মেরে ফেলেছে। তবে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। নিহত শওকত জুয়েলের দূর-সম্পর্কের চাচাতো ভাই।’
স্বজনরা জানান, নিহত শওকতের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়। তিনি গত কয়েক বছর ধরে ওই মার্কেটের পঞ্চমতলায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে প্যাকেজিংয়ের কারখানা খোলেন। সেখানে বিভিন্ন টেক্সটাইল কোম্পানির কাপড় প্যাকেজিং করতেন।