গাজীপুরে তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে যুবকের প্রেম,৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে তৃতীয় লিঙ্গের এক নারী হিজড়ার সাথে জহিরুল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবকের গভীর প্রেমের সম্পর্ক থেকে তা গড়ায় বিয়েতে। নিকাহ রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে ধার্য করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় তাদের। পরে তার কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। এ নিয়ে আদালতে
প্রতারণার মামলা করেন ভুক্তভোগী তৃতীয় লিঙ্গের নারী (হিজড়া) সবিতা (৩৩)।
জহিরুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার খান্দার আগপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকায় বসবাস করে শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের নারী ও পুরুষ (হিজড়া) । এদের সাথেই থাকতেন সবিতা, ভালই চলছিলো তার দিন। হঠাৎ একঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় তার জীবন।
আদালতের সি আর মামলা সূত্রে জানাযায় একই বাসায় ভাড়া থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘ সাত বছর প্রেম করার পর ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর থেকেই বাইমাইল এলাকায় ওমর আলীর বাড়ীতে রুম ভাড়া নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলো তারা। বিয়ের পর তার শশুর এবং দেবর প্রায় সময় তাদের বাসায় বেড়াতে আসতো। ওই যুবক তার পরিবারের অভাব অনটনের কথা বলে প্রতারণা মূলকভাবে ফেরত প্রদানের শর্তে ৭০ হাজার টাকা নেয়। পরে তা পরিশোধ না করে তালবাহানা শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে একই কায়দায় পরিবারের সমস্যার কথা বলে আরে টাকা চায়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। ওই যুবকের চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় গত মে মাসের ২১ তারিখ রাতে ঘরে থাকা ট্রাংকে রাখা ২ লাখ টাকা এবং একলক্ষ টাকার স্বর্ণলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে সকালে সবিতা তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁর সাথে সংসার করবে বলে জানায়। তার কাছ থেকে নেয়া টাকাও ফেরত দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয় ।
প্রতক্ষ্যদর্শী পায়েল হিজড়া বলেন,নিজে থেকে তাদের বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমার বান্ধীর সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,হিজড়া বলে কি কোন বিচার পাবনা। বাড়ীর মালিক লিপি আক্তার জানান,বিয়ের পর স্বাভাবিক মানুষের মতই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ করে
শুনি সে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এই প্রতারণার জন্য তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া দরকার। তার শাস্তি দেখে কেউ যেন এমন কাজ করতে সাহস না পায়।
এ বিষয় জানতে জহিরুল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর জেলা জজকোর্ট এর আইনজীবী মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন,আমাদের রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় আইনে এই ধরনের বিয়ের কোন স্বীকৃতি নাই। তবে তার কাছ থেকে টাকা এবং স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতারাণার মামলা হয়েছে। ওই আইনজীবী মনে
করেন প্রতারণার জন্য তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হবে।
গাজীপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম বলেন,তৃতীয় লিঙ্গের সবিতার সাথে জহিরুল ইসলাম নামে যে যুবকের প্রণয়ন এটি নিয়ে একটি
সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন আছে আমি মনে করি আদালতের রায়ের মাধ্যমেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।