লালমনিরহাটে পুলিশের থাপ্পরে-কানে শোনেনা জাহাঙ্গীর!

লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলামের থাপ্পরে জাহাঙ্গীর আলম (৫০) নামে এক কৃষক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৭ই মার্চ) রাতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। এখন পর্যন্ত তার ডান কান সচল হয়নি। এর আগে একই দিন বিকেলে নিজ অফিস কক্ষের জানালা দরজা বন্ধ করে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাতিজা সাজু মিয়া রুবেলকে নির্যাতন করেন ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম।
আহত কৃষক জাহাঙ্গীর আলম আদিতমারী উপজেলার পলাশী বাজার এলাকার তসর উদ্দিন।
অভিযোগে জানা গেছে, বাবার জমি নিয়ে কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তার বড় ভাই জোনাব আলীর বিরোধ দীর্ঘ দিনের। মঙ্গলবার দুপুরে বিবাদমান জমিতে কাজ করতে গেলে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জোনাব আলী গং। এ ফোনের সাড়া দিতে ঘটনাস্থলে অফিসার গিয়ে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাতিজা সাজু মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে আটককৃতদের নেয়া হয় আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) রফিকুল ইসলামের কক্ষে। এরপর ওসি তদন্ত আটককৃতদের বিবাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাতিজা সাজু মিয়া রুবেলকে সজোরে কয়েকটি চর থাপ্পর দেন। এতে কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের কান ও ঠোঁট আঘাত পেয়ে ওসি তদন্তের টেবিলে পড়ে যান। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে হাজতখানায় রাখা হয়।
ঝামেলা এড়াতে সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের সামনে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ। বিষয়টি বাহিরে প্রকাশ না করতে ওসি তদন্ত তাদেরকে হুমকী দেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মুছলেকায় মুক্তি পেয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গেলে কৃষক জাহাঙ্গীর আলমকে ভর্তি এবং ভাতিজাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
আহত ভাতিজা সাজু মিয়া রুবেল বলেন, নিজের বাড়ির কাজ করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে ওসি তদন্ত প্রথমে আমাকে পরে আমার চাচা জাহাঙ্গীরকে জোরে জোরে বেশ কিছু থাপ্পর দেয়। আমরা অসুস্থ্য হলে হাজতখানায় আটকে রাখে। এ বিষয়টি কাউকে না বলতেও হুমকী দেন ওই ওসি তদন্ত।
আহত কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোন মামলা ছাড়াই ভাতিজা ও আমাকে থানায় নিয়ে ওসি তদন্তের অতর্কিত ভাবে আমাদের দু’জনের কানে মুখে চর থাপ্পর দিলে আমি টেবিলে পড়ে যাই। পরে হাজতকানায় আটকে রাখে। সন্ধ্যায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিলে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখন পর্যন্ত ডান কানে কিছুই শুনি না। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেন।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ খবরে ঘটনাস্থল থেকে তাদের দুইজনকে আটক করে নিয়ে আসলে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পরে আপোষের স্বার্থে প্রতিপক্ষেরই জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমি কেন থানায় কেউ আঘাত করেনি। এমন ঘটনা ঘটলে তো তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হত না।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, ৯৯৯ নম্বরের কলে দুইজনকে আটক করে পরে মুছলেকায় ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি শুনেছি। ঘটনার সময় আমি থানার বাহিরে জাতীয় কর্মসুচিতে ছিলাম। মারপিটের কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।