যে কারণে বাতিল হলো জামিল হাসানের প্রার্থীতা
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতাঃ
বারবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শুনানি শেষে বাতিল হয় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানের (দুর্জয়) প্রার্থীতা। গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বপ্রথম গত ২১ এপ্রিল তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। সে সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে শোডাউন ও মিছিল করেছিলেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের বাইরেও প্রার্থীর সমর্থনে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করা হয়। সে সময় নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানকে(দুর্জয়) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
একই মাসে ২৭ এপ্রিল নির্বাচনী এলাকার বাইরে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা দিতে হয়েছিল প্রার্থীর এক কর্মীকে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে শ্রীপুর নির্বাচনী এলাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সদর নির্বাচনী এলাকার বাঘেরবাজারের সাবাহ গার্ডেনে এক মতবিনিময় সভা করেন তিনি। সে সময় বিষয়টি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে এলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। জেলা প্রশাসনের মেজিস্ট্রেট ইশতিয়াক মজনুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘেনের দায়ে প্রার্থীর কর্মী আক্তার হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সে সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মাইটিভির স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম সহ আরো ৩ সাংবাদিককে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠে।
চলতি মাসের ৭ মে মঙ্গলবার নির্বাচনি এলাকার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে নির্বাচনী সভায় ভোটারদের খাবার বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে এই প্রার্থীর কর্মীকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। জরিমানার সময় মেজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেদিন সেখানে নগরহাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রচুর ভোরটার ও নেতাকর্মী জড়ো করেন ওই প্রার্থী। এ সময় সভাস্থলের পাশে ভোটারদের খাওয়ার জন্য প্রচুর খাবার রান্না করা হয়। এ খরব পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) শাইখা সুলতানা। তিনি আইন অনুযায়ী প্রাথীর কর্মী হারুন অর রশিদকে ৫০হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে সভা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে সভাস্থলের প্যান্ডেল খুলে ফেলেন। এ সময় রান্না করা খাবার জব্দ করে সেগুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করে দেন। আইন প্রয়োগ করে ফেরার পথে তিনি খবর পান নির্দেশ না মেনে সভা চালানো হচ্ছে। পরে তিনি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শোভন রাংসাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পুনরায় উপস্থিত হন। সে সময় তিনি আবারো প্রার্থীর এক কর্মীকে আইনের আওতায় জরিমানা করার প্রস্তুতি নেন । এমন সময় সেখানে প্রার্থী জামিল হাসান উপস্থিত হয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) হুমকি দেন। তিনি আইনের আওতায় আনতে যাওয়া তার কর্মীকে সেখান থেকে মিছিল করতে করতে নিয়ে চলে যান।
পরবর্তীতে গত ১০ মে তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতিরবাজারের ক্রিয়েটিভ স্কুল মাঠে আইন লঙ্ঘন করে প্রচুর লোকজন জড়ো করে নির্বাচনী সভা করেন এই প্রাথী। এ ছাড়া তার নির্বাচনী প্রচারে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানকে (দুর্জয়) এখন পর্যন্ত দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তার কর্মীদের দুইদফা জরিমানা করা হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গিকার করেছেন।
উল্লেখ্য, জামিল হাসান (দুর্জয়) শ্রীপুর উপাজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই। জামিল হাসান ওই নির্বাচনী আসনের টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রহমত আলীর ছেলে। এ ছাড়া তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তিনি এর আগে ওই নিবাচনী আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পান তার ছোট বোন রুমানা আলী। পরে বোনকে সমর্থন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান ও বোনের পক্ষে নির্বাচনী কাজে অংশ নেন।
শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান প্রার্থীরা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. আ. জলিল ও মাওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন। এই উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রধান প্রার্থী হয়েও পরে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন জামিল হাসানের প্রার্থীতা বাতিল করলেও উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ আছে। আপিল বিভাগ যৌক্তিক মনে করলে তার প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সম্প্রতি নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের প্রার্থীতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তিনি সড় পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করে তার প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনেরর চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানও তার প্রার্থীতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার নেতাকর্মীরা।