মালয়েশিয়ায় শ্রমিক জটিলতায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কী সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবার যে সমস্যা হচ্ছে, তা সরকার খতিয়ে দেখছে। কেউ দায়ী থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার সংসদের বৈঠকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান সংসদ নেতা। এর আগে বিকেলে দ্বাদশ সংসদের তৃতীয় ও বাজেট অধিবেশন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয়।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যর্থতা কার, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। অনেকেই গিয়ে থাকেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সরকারের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কিছু লোক দালালের মাধ্যমে যেতে চায় এবং সমস্যায় পড়ে যায়। এতে সমস্যা তৈরি হয়।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার বিশেষ ফ্লাইট চালু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ ফ্লাইট, অন্যান্য ফ্লাইটের সঙ্গে সংযুক্ত করে সবাইকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বাদ পড়ে গেছে। বাদ পড়ার কারণ কী, সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যখনই আলোচনা করে ঠিক করা হয় কত লোক যাবে, ঠিক তখনই দেখা যায় একশ্রেণির লোক, যারা জনশক্তির ব্যবসা করে, তারা তড়িঘড়ি করে লোক পাঠানোর চেষ্টা করে। এদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কিছু লোকও সংযুক্ত আছে। যার ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রতিবারই যখন সরকার আলোচনা করে সমাধানে যায়, তখনই কিছু লোক ছুটে যায়, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যারা যায়, তাদের কাজের ঠিক থাকে না, চাকরিও ঠিক থাকে না, বেতনের ঠিক থাকে না; সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ে। এটা শুধু মালয়েশিয়া না, অনেক জায়গায় ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, বারবার বলা হয়েছে– জমিজমা, ঘরবাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা খরচ করার দরকার নেই। যদি দরকার হয়, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। প্রয়োজন বোধে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া হয়। সেখানে তাকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে, সে যে যাচ্ছে তার চাকরিটা সুনির্দিষ্ট কিনা। এটা হলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, তার পরও দেশে কিছু মানুষ আছে, কে আগে যাবে– সে দৌড় দিতে গিয়ে হাতা-খাতা, বাড়ি-ঘর সব বিক্রি করে; তার পরে পথে বসে। অথবা সেখানে যদি চলেও যায়, গিয়ে বিপদে পড়ে। মানুষকে বলা হয়েছে, এভাবে না যেতে। সোজাসুজি নিয়ম মানলে এ বিপদের সৃষ্টি হয় না।
ফেনী-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনী থেকে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া বারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফেনীতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া প্রকল্প ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বন্ধ করে দেন তিনি। নিজের এলাকার উন্নয়নে খালেদা জিয়া তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি; বরং আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, ফেনীর যথাযথ উন্নয়ন হয়।
সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা
নিরাপদ সাইবার স্পেস ও সাইবার অপরাধ দমনে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি আলাদা ‘সাইবার পুলিশ ইউনিট’ গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিশেষ চক্র, বিশেষভাবে সাম্প্রদায়িক চক্র, যুদ্ধাপরাধী চক্র ও বিএনপি-জামায়াত ক্রমাগতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তারা মূলত ফেসবুক, এক্স, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিকৃত খবর প্রচার করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এবং সাইবার সাপোর্ট হেল্প লাইনের মাধ্যমে গুজব-সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বিদেশে অবস্থানরত গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
সরকারদলীয় এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিলের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। আর ৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণকাজ চলমান।