রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

সরকারের কড়া নজরে কোটা আন্দোলন

রিপোর্টারের নাম : / ৩১ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার মধ্যেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, আদালতের আদেশ অমান্য করে কার উসকানিতে এ ধরনের আন্দোলন চলছে, সে বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ‘নরম দৃষ্টিকোণ’ থেকে দেখা হলেও এটাকে কেউ যাতে ইস্যু বানিয়ে ফায়দা নিতে না পারে, সে দিকেও রয়েছে কড়া দৃষ্টি। কোটা আন্দোলন ঘিরে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা গত ১ জুলাই থেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, সবকিছুই পর্যবেক্ষণে রয়েছে। পাশাপাশি জানমাল রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতিও রয়েছে। সড়ক অবরোধের নামে টানা জনভোগান্তি, ভাঙচুর বা ন্যূনতম নাশকতা মেনে নেওয়া হবে না। এরই মধ্যে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর ও কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করলেও বিভিন্ন ফুটেজ দেখে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনটি এখন আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এর পেছনে কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে পুলিশের সঙ্গে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। পুলিশ সে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেবে না। সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে জনভোগান্তি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। কেউ জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না এবং এই ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা রয়েছে।

সরকারের দায়িত্বশীল নেতা এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও মনে হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলা কোটাবিরোধী আন্দোলনকে নরম দৃষ্টিতে দেখা হলেও নানা কারণে এখন আর এই আন্দোলন ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি, বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী। কোটা নিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা কুচক্রী মহল কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। গত কয়েকটি বছরে কোটা না থাকায় নারীদের অংশগ্রহণ হতাশাজনক। পিছিয়ে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও।

গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন শেষে সুধী সমাবেশে দেওয়া এক বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমি মনে করি তাদের (শিক্ষার্থী) একটু অপেক্ষা করা উচিত, আন্দোলন থামানো উচিত। কারণ পৃথিবীর সব জায়গায় কিন্তু কোটা রয়েছে। সব দেশেই কিছু অনগ্রসর জায়গা থাকে, যেমন আমাদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা রয়েছে এবং সংবিধানেও সেটি বলা আছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র ভাইদের কিছু বলার থাকলে তারা রাস্তাঘাট বন্ধ না করে আদালতে এসে তাদের যা বলার তা যেন বলেন। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে, হাসপাতালগামী রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে। যে যেখানে যাচ্ছেন, তারা বাধাপ্রাপ্ত হলে ৫-৬ ঘণ্টা বসে থাকেন। সেই সাধারণ মানুষের যে কী অভিব্যক্তি, ছাত্রদের তা শোনা উচিত। আমি মনে করি, রাস্তা অবরোধ না করে আমাদের প্রধান বিচারপতি যেভাবে বলেছেন, তাদের সব দাবি যেন আদালতে এসে বলেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে কি না, কারও ইন্ধন রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি অন্যদিকে ধাবিত করার চেষ্টা চলছে কি না—এসব নিয়ে ডিবির টিম ও থানা-পুলিশ কাজ করছে। কেউ যদি হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে আন্দোলনের নামে, সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, ধরে নিতে পারি অনুপ্রবেশকারীরাই এসব কাজ করছে।’

কোটা শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কোটার বিরোধিতা করে কিছু লোক, কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় আন্দোলন করছেন। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট সবার ভরসাস্থল। আদালতের নির্দেশনা সবার মেনে চলা উচিত। কিন্তু কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসে না গিয়ে বিভিন্ন সড়কে বসে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। অনেক জায়গায় গাড়িতে তারা হাত দিচ্ছেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আদালত মানবে না, পুলিশের কথা মানবে না, তাহলে আমাদের করার কী আছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ক্ষমতা, আমরা সেটাই করব। কারণ, আন্দোলনরতরা যদি জানমালের ক্ষতি করে, সড়ক অবরোধ করে এবং মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে যৌক্তিক কাজ, সেটাই করা হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার কালবেলাকে বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য। এর পরও আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ এবং জানমালের ক্ষতি করলে সাধারণ জনগণের স্বার্থে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা, যানবাহনে গতিরোধ ও মারধরের ঘটনায় শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে করা ওই মামলায় আসামি হিসেবে ‘অজ্ঞাতপরিচয় অনেক’ উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, গত ১১ জুলাই কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে বিকেল ৪টায় স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা শাহবাগ মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন ও পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন।

এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করে সাধারণ জখম করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাশে নিরাপদ স্থানে রাখা এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যাননের চারদিকে ঘেরাও করে অনেক সংখ্যক আন্দোলনকারী উঠে উদ্দাম নৃত্য শুরু করেন। তারা ওয়াটার ক্যানন চালককে গাড়ি থেকে জোর করে বের করার চেষ্টা ও গতিরোধ করেন। ফলে এপিসি ২৫-এর সামনের দুটি এসএস স্ট্যান্ড, বনাটের ওপরে বাঁ পাশে রেডিও অ্যান্টেনা এবং ডান পাশের পেছনের চাকার মার্টগার্ড চলি ও ওয়াটার ক্যাননের বাঁ পাশের লুকিং গ্লাস ভেঙে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, টেপটেনিস বল ও ইটের টুকরা ছুড়ে মারেন। এতে অনেক পুলিশ সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন।

মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. আরশাদ হোসেন জানান, ওই মামলায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তদন্তসাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর