দ্বিতীয় ধাপের আখেরী মোনাজাত শেষ,৫৯ তম বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা
গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ তীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৮ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টা ৯ মিনিটে শুরু হয়ে এ মোনাজাত শেষ হয় ১২ টা ২৭ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ে নেজামের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
১৮ মিনিটের এই মোনাজাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনা করা হয়। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ মোনাজাতে অংশে গ্রহণ করেন। বিশ্ব ইজতেমায় দ্বিতীয় পর্বে তিন দিনের অংশগ্রহণকারী মুসুল্লী ছাড়াও শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের এসেছেন। শিল্প অঞ্চল গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাক ডাকা ভোর থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। লাখো মুসল্লির সাথে আল্লাহকে রাজিখুশি করতে ময়দানে এসেছেন নারীরাও।
মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে অনেকে উড়াল সেতুর নিচে মহাসড়কের পাশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। সেখান থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন তারা।
দ্বিতীয় পর্বের শুরায়ী নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান হেদায়েতি বয়ান করছেন। তরজা
(অনুবাদ) করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহত মূলক কথা বলেন। বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জুবায়ের।
দুই পর্বের ইজতেমায় বার্ধ্যক ও স্ট্রোক জনিত কারণে ৯ মুসল্লীর মৃত্যু হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে জানাযার নামাজ শেষে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান
গেল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। শুরায়ী নেজাম এর প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিন দিনের এই ইজতেমায় প্রায় লাখো মুসল্লী অংশ নিয়েছেন।
ইজতোমার আয়োজকরা জানান এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। প্রথম ধাপে ঢাকার একাংশসহ ৪১টি জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।
৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে ঢাকার একাংশ সহ ২১ টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেয় ইসতেমায়।
৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাধ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
“৫৯ তম বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা”
২০২৬ সালে শুরায়ী নেজামের অধীনে ওলামায়ে কেরামে তত্ত্বাবধানে টঙ্গী তুরাগ নদের তীরে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ৫৯ তম বিশ্ব ইজতেমা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান।
তিনি বলেন,২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম ধাপ এবং তিন দিন বিরতি দিয়ে ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১১ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাত এর মাধ্যমে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম আয়োজন হয়েছিল ১৯৪৬ সালে কাকরাই মসজিদে। দিন দিন লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্প নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে নিয়মিত আয়োজন হয় বিশ্ব ইজতেমার।
আখেরি মোনাজাত কে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ইজতেমার শেষ দিনে তাবলীগের সাথী ছাড়াও সাধারণ মুসলমানরা ভিড় জমান তুরাগ তীরে। কানায় কানায় ভরে ওঠে পুরো টঙ্গী এলাকা। অনেকে আবার আগের দিন রাত থেকেই ময়দানের আশেপাশে অবস্থান নেন।