সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

এই প্রথম রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে

রিপোর্টারের নাম : / ৩৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শেষদিনে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় নিট রিজার্ভ রাখার যে লক্ষ্য ছিল, এবার সেই লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে বাংলাদেশ। আজ ৩০ জুন অর্থবছর শেষে দেশের নিট রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এর আগে টানা ৪টি ত্রৈমাসিকে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এ অর্থ যোগ হয়। একই দিন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং কোরিয়া থেকে আসা প্রায় ৯০ কোটি ডলারও রিজার্ভে যোগ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি নিট রিজার্ভও বেড়েছে।

নিট রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার এবং এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব করা হয়, সেটিই হলো নিট রিজার্ভ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এই তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ নিট রিজার্ভ রাখতে হবে, তা-ও ঠিক করে দিয়েছিল আইএমএফ। সে অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সূত্রগুলো জানায়, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর গত চার ত্রৈমাসিকে আইএমএফের বেঁধে দেওয়া নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশের অনুরোধে বারবার শর্ত শিথিল করে বিগত কিস্তিগুলোর অর্থ ছাড় করেছে আইএমএফ।

সংস্থাটির শর্তানুযায়ী, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশকে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ১০ কোটি ডলার রাখতে বলা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে তা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের লক্ষ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দিনশেষে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার। একই দিন বিবিএম-৬ অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। আর নিট বা দায়হীন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। আর নিট রিজার্ভ ছিল ১৩ বিলিয়নের ঘরে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ যেমন এসেছে, তেমনই আরও কয়েকটি উৎস থেকে রিজার্ভে ডলার যোগ হয়েছে। এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স মিলে ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। তবে তিনি বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস ও নিট রিজার্ভের তথ্য জানাননি।

টানা চার ত্রৈমাসিকে রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ হয়নি : আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে সেই নথিপত্র অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। পরে প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য ছিল ১৭ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, এর বিপরীতে ছিল ১৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার, এর বিপরীতে বাংলাদেশের ছিল প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। আর গত মার্চ শেষে লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার, এর বিপরীতে বাংলাদেশ রাখতে সক্ষম হয় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারেরও কম।

বিদেশি মুদ্রা সংকটের মধ্যে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। ওই আবেদনের ছয় মাস পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৩৮টি শর্তে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)Ñ এই তিন আলাদা কর্মসূচির আওতায় ওই ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের সময় দাতা সংস্থাটি জানায়, শর্তপূরণসাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে তিনটি কিস্তি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পাওয়া যায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যায়। আর তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পাওয়া গেছে গত বৃস্পতিবার। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার আর চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

এদিকে আইএমএফের সংশোধিত শর্তানুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর শেষে দেশের নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ এবং ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর