ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে উঠছে নতুন শিল্প, উন্নতি হয়েছে শিক্ষা খাতে
![](https://kolomerbatra.com/wp-content/uploads/2023/07/Screenshot_27-8-700x390.jpg)
২০০৬ সালে ঠাকুরগাঁও জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। স্বল্পসংখ্যক মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল তখন। বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগের ফলে ২০২২ সালে ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে এ জেলার শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে।
জেলায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন কল-কারখানা। সহজিকরণ হয়েছে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থনীতি, সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন খাত। শুধু তাই নয়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে উন্নতি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতেরও।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গৌরীপুরে ইপিভি ঠাকুরগাঁও লিমিটেড নামের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ থেকে নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ইতোমধ্যে এ জেলার শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ১০৪ মেগাওয়াট। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিল মাত্র ৯১ হাজার ১১২ জন। বর্তমানে ৪ লাখ ১৮ হাজার ৯১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও। পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়িতেও। ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশনের পাশে নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস। এখানকার হাতেগোনা কয়েকজন বাসিন্দা আগে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় ছিলেন। ২০২২ সালে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পর এখানকার সব বাসিন্দা এখন বিদ্যুৎ সেবার আওতায় এসেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী হরিণমাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হাওলাদারও বললেন, কয়েক বছর আগেও এলাকার সবার ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। এখন সবার ঘরেই বিদ্যুৎ আছে। যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কারণে এত পরিবর্তন এসেছে, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গৌরীপুরে ইপিভি ঠাকুরগাঁও লিমিটেড নামের সেই কেন্দ্রে গত শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কেন্দ্রটিতে। ১৫ একর জমিতে গড়ে তোলা এই কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ কাজ করছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে এ জেলায় নতুন নতুন কল-কারখানা গড়ে উঠছে। এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ম্যানেজার (অপারেশন) মো. জাহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৩২ মেগাওয়াট কেপাসিটির। পিকআওয়ারে ১১৪ মেগাওয়াট চাহিদা থাকে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়। এতে পুরো ঠাকুরগাঁওয়ের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এখানকার বিদ্যুৎ অন্যান্য কেন্দ্রের মতো জাতীয় গ্রিডে যায়, সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার ফলে এখানকার গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সেবা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জেলার প্রতিটি ঘরে, কল-কারখানায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সব জায়গায় বিদ্যুৎ রয়েছে। চাহিদার তুলনায়ও উৎপাদন বেশি এই কেন্দ্রটি ঘিরে এখানে শিল্পায়নের কাজ চলছে। অর্থনৈতিক কর্মকা-, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এ এলাকার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হয়েছে ॥ শতভাগ ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও। শিক্ষার মান উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছে অনেক নতুন নতুন পদক্ষেপ। এর মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, শতভাগ উপবৃত্তি কার্যক্রম, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপন, শিক্ষার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ, বিদ্যালয়ে ওয়াই ফাই সংযোগ স্থাপন প্রভৃতি।
কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ব্যবহার করতে পারছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে হাতে-কলমে কম্পিউটার সম্পর্কিত নানা বিষয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। গত রবিবার ঠাকুরগাঁও রোড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও এমন চিত্র দেখা গেছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাসরুমে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে সংযোগ দেওয়া ওয়াই ফাই দিয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক কিছু শিখছে।
জানতে চাইলে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মোসা. মাইসা ফারজানা জানায়, সে গুগল আইডি, জিমেইল আইডি খুলতে পারে। এ ছাড়া মাইক্রোসফট ওয়ার্ডসহ কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা অর্জন করেছে বিদ্যালয়টির শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. কফিল উদ্দিন জানান, ২০২২ সালে ল্যাবটি স্থাপনের পর থেকে ছাত্রীদের হাতে-কলমে আইসিটি সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। এতে উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ডিজিটাল উপকরণ দেওয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ও মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়ায় ছাত্রীরা মনোযোগী হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, ২০০৬ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার ৪টি উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ছিল। বর্তমানে জেলায় পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার একমাত্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালকে আটতলা বিশিষ্ট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স ও সহায়ক জনবল নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।