নেশার টাকা না দেয়ায় স্ত্রীকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট সংবাদদাতাঃ লালমনিরহাটে নেশার টাকা না দেয়ায় স্ত্রী আনিছা বেগমকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন নেশাখোর স্বামী আজিজুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্র ও ব্লেড দিয়ে কেটে ক্ষতস্থানে মরিচের গুড়া ও লবন লাগিয়ে নির্যাতন করেছেন।
নির্যাতিত আহত আনিছা বেগম লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ২নং ফুলগাছ গ্রামে। বুধবার (২২ মে) দুপুরে আনিছার বাবা আমির হোসেন ৩ জনকে অভিযুক্ত করে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪/১৫ বছর আগে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া এলাকার আমির হোসেন এর মেয়ে আনিছা বেগম এর সাথে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ২নং ফুলগাছ গ্রামের জাবুল ইসলামের ছেলে আজিজুলের সাথে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর আনিছা বেগম ও আজিজুলের সংসার ভালই চলছিল। এর মধ্যে তাদের ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানও জন্মগ্রহন করে।
গত কয়েক বছর থেকে আজিজুল নেশায় আসক্ত হয়ে আনিছার সাথে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ ও ডাং মার করে। সব সময় নেশার টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকে। আনিছা সংসারে অশান্তি হওয়ার ভয়ে যতটুকু পারে স্বামীকে নেশার জন্য টাকা দেয়। এক পর্যায়ে স্বামী আজিজুল ও শ্বশুর-শ্বাশুরী আনিছাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলেন। আনিছা তার বাবার নিকট থেকে কিছু টাকা এনেও দেন। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর টাকা ফুরিয়ে গেলে আবারও নেশার টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন আজিজুল। এবারে টাকা এনে দিবেনা মর্মে জানালে কপালে নির্মম নির্যাতন সইতে হয় আনিছার।
এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে আজিজুল তার স্ত্রী আনিছাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। এতে আনিছা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির সহযোগিতায় ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে সেই ক্ষতস্থানে শুকনা মরিচ ও লবন লাগিয়ে দেয়। এ যেন আদিম মধ্যযুগিয় বর্বরোচিত লোমহর্ষক ঘটনাকেও হার মানায়। এ সময় আনিছা চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন সাহায্যের জন্য ছুটে আসলে আজিজুল তাদেরকেও ধারালো অস্ত্র উচিয়ে মারতে যায়। পরে অস্ত্রের ভয়ে লোকজন চলে যায় এবং আনিছার বাবার বাড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আনিছার বাবা দ্রুত মেয়ের বাড়িতে এসে আশপাশের লোকজনসহ গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
আনিছার বাবা আমির হোসেন বলেন, লোক মুখে সংবাদ পেয়ে আমার মেয়েকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। এ ঘটনায় আনিছার স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে অভিযুক্ত করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার চাওয়া অভিযুক্তদের সঠিক বিচার এবং মেয়ে ও নাতিরা যেন নিরাপদে থাকে বলেও জানান তিনি।
স্বামীর এহেন বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে আনিছা বলেন, একজন স্বামী কিভাবে তার স্ত্রীকে এরকম নির্যাতন করতে পারে। আমি মরে গেলে আমার ছেলে-মেয়ের ভবিষৎ কি হবে। এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার সরকার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই ভিকটিমের অবস্থা জানার জন্য হাসপাতালে অফিসার পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।