সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

পাঁচ দিনেই পাঁচ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স

রিপোর্টারের নাম : / ১৪২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে হোঁচট খেলেও ঈদের আগে রেমিট্যান্সে বন্যা বইছে। মাত্র পাঁচ দিনেই ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর প্রবাসী আয়ের এই জোয়ারের কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা আর নামবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা) টাকার অঙ্কে পাঁচ দিনের এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার কোটি টাকার বেশি দেশে পাছাচ্ছেন প্রবাসীরা।

বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের দরের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স দেশে আনছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯৫/৯৬ টাকায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দেশে আনছে। এ হিসাবে টাকার হিসাবে এই পাঁচ দিনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

রেমিট্যান্সপ্রবাহে নিম্নমুখী ধারায় শেষ হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছর। ৩০ জুন শেষ হওয়া এই অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় অন্য কেনাকাটা করতে অন্যান্যবারের মতো এবারও পরিবার-পরিজানের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি ঈদের পর মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম পাঁচ দিনে (১ থেকে ৫ জুলাই) ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন এসেছে ১০ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

এর আগে কোনো ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে এমন উল্লম্ফন দেখা যায়নি। ঈদের ছুটির আগে আরও দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ব্যাংক খোলা। এই দুই দিনেও একই হারে রেমিট্যান্স আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন সিরাজুল ইসলাম।

আর রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনের কারণে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা আর নামবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার আকুর আমদানি বিল একটু কম এসেছে, ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার এই বিল পরিশোধ করা হবে। তখন রিজার্ভ বেশ খানিকটা কমে আসবে। তবে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না।’

‘বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। ঈদের আগে দুই দিনের রেমিট্যান্স যোগ হলে তা আরও বাড়বে। তখন সেখান থেকে ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই অবস্থান করবে।’

আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৯ মে আকুর রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর সপ্তাহ খানেক রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় কয়েক দিন পর অবশ্য তা ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বাজার ডলারের সংকট দেখা দেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করায় সেই রিজার্ভ ফের ৪২ ডলারের নিচে নেমে আসে; এক পর্যায়ে তা ৪১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। এর আগে মেয়াদে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মেয়াদে আকুর ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল শোধ করা হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর