শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেল থেকে ২ নারীসহ ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ ভুরুঙ্গামারীতে চর বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দাবীতে মানববন্ধন ‎উপজেলা প্রকৌশলীদের উপর হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন কাজিপুরের লাইসিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত  লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক! জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি নিয়ে দুপক্ষের  পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী কুড়িগ্রামে ‘’ফ্রেন্ডশিপ ডিসএবিলিটি প্রোগ্রাম’’ এর এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত কোনাবাড়িতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার-১ লফস’র আয়োজনে খেলার মাঠ,পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বাজেট বরাদ্দ বিষয়ক আলোচনা সভা সলঙ্গায় ধারালো ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত যুবক

ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা প্রকাশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

রিপোর্টারের নাম : / ৯০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩

চারটি মৌলিক নীতিমালা এবং ১৫টি অভিলক্ষ্যসংবলিত বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়ে এ রূপরেখা পাঠ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। পরে তা গণমাধ্যমকে পাঠায় মন্ত্রণালয়।

রূপরেখার শুরুতে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে তার ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়ন তথা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৈশ্বিক জিডিপিতে সামষ্টিক অংশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রগণ্য অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সামগ্রিক কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি খাতে গতিশীল বিকাশ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ তাই এ অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সবার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে।

রূপরেখায় চারটি মৌলিক নীতিমালার উল্লেখ রয়েছে। যার মধ্যে প্রথমেই আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। দ্বিতীয় মৌলিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতিগুলো, যথা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রাখা।

রূপরেখার তৃতীয় মৌলিক নীতিমালাটি হলো সমুদ্র আইনসংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ বা আনক্লজ, ১৯৮২সহ প্রযোজ্য জাতিসংঘ চুক্তিগুলো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে চলা। চতুর্থ মৌলিক নীতিমালায় বলা হয়েছে টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।

রূপরেখা অনুযায়ী, মৌলিক নীতিমালার আলোকে ১৫টি অভিলক্ষ্য বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা এবং এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে পরিচালিত করবে। প্রথম অভিলক্ষ্যটি হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা, অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং সংলাপ ও বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।

দ্বিতীয় অভিলক্ষ্যে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মেরিটাইমবিষয়ক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিদ্যমান কাঠামোকে শক্তিশালীকরণ, যথা সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়া ও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনক্লজ, ১৯৮২সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন অনুসারে অবাধ সামুদ্রিক চলাচল ও কোনো দেশের ভূখণ্ড বা জলসীমার ওপর দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিমান চলাচলের অধিকারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন বজায় রাখা।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিরক্ষা, শান্তি বিনির্মাণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অর্থবহ ও আন্তর্জাতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অবদান রাখার কথা বলা হয়েছে তৃতীয় অভিলক্ষ্যে।

চতুর্থ অভিলক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধগুলো দমনে নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়াসকে সমর্থন করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রবর্তিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সম্প্রসারণ, ‘নারী শান্তি’ ও ‘নিরাপত্তা’ এজেন্ডার ওপর অব্যাহত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখা, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখা রূপরেখার পঞ্চম অভিলক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।

ষষ্ঠ অভিলক্ষ্যে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা সুসংহতকরণের মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নের অধিকার এবং সবার সার্বিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সুষম ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সপ্তম অভিলক্ষ্যটি হলো ভৌত, প্রাতিষ্ঠানিক, জ্বালানি, ডিজিটাল এবং মনুষ্য পর্যায়ে সংযুক্তির প্রসার, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য, পরিষেবা, পুঁজি এবং জনগণের চলাচল সহজতর করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, অভিগম্য উদ্ভাবন এবং উন্মুক্ত ও নিরাপদ সাইবারস্পেস ও মহাকাশে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

যেকোনো ভবিষ্যৎ সংকট ও বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ বাণিজ্যপ্রবাহকে সুসংহত করতে টেকসই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক জোগান শৃঙ্খল বা ভ্যালু চেইন তৈরির উদ্দেশ্যে দেশীয় কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতগুলোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে অষ্টম অভিলক্ষ্যে।

নবম অভিলক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪সহ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উন্নয়ন অঙ্গীকারের আলোকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ, টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করার কথা বলা হয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা, জল-সংহতি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে দেশীয় উত্তম চর্চাগুলোকে তুলে ধরাসহ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার দশম অভিলক্ষ্য।

একাদশ অভিলক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, সামুদ্রিক দূষণ এবং পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যমান কার্যক্রম গ্রহণ করা।

সবার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশের রূপরেখার দ্বাদশ অভিলক্ষ্য। ত্রয়োদশ অভিলক্ষ্য হলো ভবিষ্যৎ অতিমারী মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যনিরাপত্তা জোরদারে ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সুরক্ষাসামগ্রীর মতো ‘বৈশ্বিক সম্পদ’-এ সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং পরস্পরের পরিপূরক স্বার্থ সমুন্নত রাখতে উপ-আঞ্চলিক অংশীদার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার কথা বলা হয়েছে চতুর্দশ অভিলক্ষ্যে। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার পঞ্চদশ বা শেষ অভিলক্ষ্যটি হলো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে সহযোগিতা ও সম্পৃক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে সবার সামষ্টিক কল্যাণ নিশ্চিতপূর্বক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প পূরণে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর