মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
উল্লাপাড়ায় ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ভাঙ্গুড়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইউনিয়ন কৃষকদলের আহব্বায়ককে অব্যাহতি কাজিপুরে আ’লীগের মশাল মিছিল; ফেসবুকে ভাইরাল  কুড়িগ্রামে চরাঞ্চল মানুষের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ‘সুস্বাস্থ্য’ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু নাটোরে বিএসটিআই’র অভিযানে তিন বেকারি কারখানাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব সভাপতি আবু বকর সিদ্দীক,সাধারণ সম্পাদক রনজক রিজভী কাজিপুরে সারে তিন লাখ টাকার অবৈধ জাল পুড়িয়ে ধ্বংস  কুড়িগ্রামে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন ভাঙ্গুড়ায় গ্রামীণ কৃষকের উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার-২০২৫ অনুষ্ঠিত দুদক কর্মকর্তার দুর্নীতি ধরিয়ে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- দুদক চেয়ারম্যান

ঈদ আনন্দ নেই তিস্তাপাড়ের বানভাসি মানুষের!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০২২

চৈত মাসের বান(বন্যা) আর বৈশাখের হুড়কা(ঝড়) বাতাসে খাইলো হামার এবারকার (এ বছরের) ঈদ। চৈত মাসের বান ও বৈশাখে হুড়কা বাতাস আর এত বড় বড় শিলাবৃষ্টি জীবনে কোন দিন দেখং নাই বাহে। ঈদের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক মোক্তার আলী(৭০) এসব কথা বলেন।

মোক্তার আলী জানান, তিস্তার বাম তীরে বসবাস করা প্রতিটি পরিবার একাধিকবার তিস্তা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। বসতভিটার সাথে বিলিন হয়েছে ফসলি জমি। শুস্কমৌসুমে তিস্তার বুকে জেগে উঠা বালু চরে কঠোর পরিশ্রম করে ধান, আলু, তামাক, পিয়াজ, রসুন, ভুট্টা, বাদামসহ নানান জাতের ফসল বুনেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। শুস্ক মৌসুমের এ ফসল থেকে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সঞ্চয় করেন তারা। শুধু তাই নয়, মেয়ের বিবাহ ও সকল উৎসব চলে এই ফসলে। মুলত শুস্ক মৌসুমের ৩/৪ মাসের ফসলে চলে তাদের পুরো বছর। তাই সর্বস্য বিনিয়োগ করে শুস্ক মৌসুমে ফসল বুনেন তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষ।

প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমের এসব ফসল বর্ষার আগেই ঘরে তুলেন চাষিরা। কিন্তু এ বছর চৈত্রি মাসে হঠাৎ বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে অসময়ে বন্যার সৃষ্ঠি করে। অসময়ের এ বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয় কৃষকদের সর্বস্য বিনিয়োগে উৎতি ফসল। এতেই শেষ নয়, বৈশাখ মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতি দিনই বৃষ্টি হচ্ছে তিস্তা পাড়ে। এ মাসেই কয়েক দফায় আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী ঝড়। এ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে বন্যার রেখে যাওয়া উচ্ছিষ্ট ফসল। লন্ডভন্ড হয়েছে ঘর বাড়ি। এক দিকে ফসলহানী অন্যদিকে কালবৈশাখীর ছোবলে ভেঙেছে আশ্রয়স্থল। সব মিলে নিদারুন কষ্টে চলছে তিস্তা চরাবাসীর জীবন জিবিকা।

প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোতে নেই ঈদের কোন আমেজ। তাদের মাঝে শুধু হতাশা আর হাহাকার। ঈদ উৎযাপন নয় বরংচ আসন্ন বন্যা মোকাবেলা নিয়ে দারুন চিন্তিত তিস্তা পাড়ের মানুষ। প্রতি বছর বন্যার জন্য যা সঞ্চিত থাকে। তা এ বছর বন্যাই নষ্ট করেছে।

ঈদ প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে গোবর্দ্ধন গ্রামের মোক্তার আলী বলেন, হামার এবারকার ঈদ খাইছে হুড়কা আর বানে। সব কিছু বিক্রি করি ধান,তামাক, ভুট্টা আর পিয়াজ-রসুন আবাদ করেছি। পাকা পাকা অবস্থায় চৈত মাসের বানে ডুবি সব নষ্ট হইছে। যেটুকু ছিল তা শিলাবৃষ্টি আর হুড়কাতে শেষ। এখন যে খামো তার বুদ্ধি নাই। ফির যে বান আসিবার নাগছে তখন কি খামো। এগুলো চিন্তায় এবার ঈদ হামার এত্তি নাই বাহে। সরকারী ভাবেও কোন খোজ খবর নেয় না কেউ। কোন সহায়তাও হামরা পাই নাই।

তার কথার সাথে যুক্ত হয়ে মফিজ উদ্দিন বলেন, উচু জমির আবাদের চেয়ে চরাঞ্চলের জমির ফলন ভাল হয়। দ্বিগুন উৎপাদন হয়। একবারের আবাদ দিয়ে সারা বছর চলি। এই আবাদে বিয়াও বাদি(বিয়ে সাদি), ঈদ, রোজা সউগ চলে বাহে। সেই আবাদ এবার বানের পানিতে ডুবি গেইছে। তখনে হামার ঈদও মাটি(নষ্ট) হইছে বাহে।

শুক্রবার(২৯ এপ্রিল) রাতে লালমনিরহাট জেলায় আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়। এতে ৫টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ৪টি উপজেলায় তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থের মাঝে সরকারী ভাবে ত্রাণ বিতরন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। শুধু মাত্র আদিতমারী উপজেলায় জনপ্রতিনিধিরা তালিকা না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারী ভাবে সহায়তা দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।

আদিতমারীর সারপুকুর ইউনিয়নের পাঠানটারী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রিক্সাচালক রেয়াজুলের একমাত্র ঘরটি ভেঙে গেলে খোলা আকাশ র নিচেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একই গ্রামের মনিরের ছেলে হাকিমের দুই ঘর লন্ডভন্ড হয়েছে কালবৈশাখীর ছোবলে। তারাও তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে। সহায়তা তো দুরের কথা কেউ দেখতেও আসেনি তাদের।

ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল হাকিম বলেন, হামার আরও ঈদ আছে ভাই। থাকার দুইটা ঘর। দুইটাই ভাঙ্গি গেছে। তিন দিন ধরে এভাবে পড়ে আছি। সাহায্য তো দুরের কথা কেউ দেখতেও আসলো না ভাই।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের ছবিসহ তালিকা করতে চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা তালিকা না দেয়ায় ঈদের আগে সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জেলার বাকী উপজেলাগুলোতে বিগত দিনের তালিকা ও বরাদ্ধ থেকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর