এক স্থানেই মিলছে সব সেবা
এক হাসপাতালেই মিলছে সব চিকিৎসাসেবা, সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। কম খরচেই যেমন মিলছে চিকিৎসাসেবা, তেমনি খাবারের মান নিয়েও রোগীদের সন্তুষ্টির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ চিত্র দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের।
এটি এখন উত্তরাঞ্চলের এক ধরনের মিনি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর দিনাজপুর অর্থাৎ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়সহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা অর্জন করেছে হাসপাতালটি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগেও উত্তরের তিন জেলার মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকামুখী হতে হয়েছে। সে সময় নানা অসুস্থতায় দিনাজপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০ ভাগকেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট কিংবা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেই সংখ্যা এখন ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। হাসপাতালটি ৫০০ বেডে হলেও এখান থেকে প্রতিনিয়ত সেবা নিচ্ছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ। এই হাসপাতালে ২০১৩ সালে প্যাথলজি ল্যাব উদ্বোধন করেন দিনাজপুর সদরের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। আধুনিক এ ল্যাবটি চালু হওয়ার পর থেকে কম খরচে সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে কৃষক মেহেরাব আলীকে (৬৫) ভর্তি করান স্বজনরা। মলমূত্র, ইজিসি, ইকো পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানান, তার হৃদযন্ত্রের দুটি জায়গায় ব্লক রয়েছে। রিং পরাতে হবে। পরের দিনই মেহেরাব আলীর হৃদ?যন্ত্রে দুটি রিং বসানো হয়। সুস্থ হয়ে ওঠেন মেহেরাব আলী। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রিং পরানোসহ সব মিলিয়ে মেহেরাব আলীর খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। প্রথমে তার স্বজনরা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ঢাকায় চিকিৎসা নিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ পড়বে তার। তারপর সিদ্ধান্ত বদলে দিনাজপুরেই চিকিৎসা নিয়েছেন। হৃদ?যন্ত্র, নিউরো এবং অর্থোপেডিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে জেলার লোকজনের বড় ভরসাস্থল এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শুধু দিনাজপুর নয়, রংপুর বিভাগের অনেকেই এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ হাসপাতালেই কর্মরত আছেন দেশসেরা নিউরো সার্জন ডা. সরোয়ার মোর্শেদ আলম। অর্থোপেডিকে আছেন এম আবদুুর রহিম মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রেন্সিপাল ডা. সৈয়দ নাদির হোসেন। পুরো উত্তরাঞ্চলেই রয়েছে যার খ্যাতি।
গত ১৪ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন এক নারী। তার বাম পায়ে রানের উপরের হাড় চার টুকরো হয়ে যায়। স্বজনরা ভেবেছিলেন হয়তো রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পায়ে সফল অস্ত্রোপচার করেন ডা. সৈয়দ নাদির হোসেন।
উত্তরের এ হাসপাতালের জন্য যেমন ঢাকায় রোগীর চাপ কমেছে, তেমনি সাধারণের চিকিৎসা খরচও কমেছে বহুগুণ। এদিকে হাসপাতালটির খাবারের মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখতে সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকেন ওয়ার্ড মাস্টার মাসুদ রানা। তার ভাষ্য, হাসপাতাল থেকে যেটুকুই খাবার দেওয়া হোক না কেন, সেটুকুই যেন রোগী তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারেন।
কথা হয় মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন আফতাব নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, যদি মাথা ঠিক থাকে তাহলে সব ঠিক। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হুইপ ইকবালুর রহিমের কঠোর অবস্থানের কারণে এ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে ৮০ টাকায় ইসিজি পরীক্ষা, ২০০ টাকায় ইকো ও এক্স-রে, ২ হাজার টাকায় সিটি স্ক্যান, ৩ হাজার টাকায় এমআরআই এবং ২ হাজার টাকায় অ্যানজিওগ্রাম করা হয়। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেখানে রোগীর খরচ হয় ইসিজিতে ৩০০ টাকা, ইকো ১ হাজার টাকা, এক্স-রে ৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, সিটি স্ক্যান ৫ হাজার টাকায়, এমআরআই ৬ হাজার টাকায় এবং অ্যানজিওগ্রামের ক্ষেত্রে ১০-১৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া শারীরিক ব্যথা নিরাময়ের জন্য চালু করা হয়েছে পেইন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারভেনশন সেন্টার। একই সঙ্গে ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ টেলিমেডিসিন সেবা নামক অনলাইনভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করেছে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। জানা গেছে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ২০১৮ সালে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।