বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০২২’ উপলক্ষে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং আমরা অর্জন করেছি আমাদের মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যান। জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও পদক্ষেপ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০২২’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আনন্দিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৫১ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন তা জাতির পিতা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে। বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম আজ সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই কৃষি খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষিখাতে ভর্তুকি এবং কৃষি ঋণের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে তৃতীয় ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কেবল ধান নয়, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও রফতানি আয়ে মৎস্যখাতের অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। তিনি বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্য স্টেট ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। দেশ এখন মাছে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই না, উদ্বৃত্তও বটে। এ অর্জন জাতির জন্য গৌরবের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দায়িত্বশীল পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং এর সুফল যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ভোগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পর্যটনশিল্প বর্তমান বিশ্বে শ্রমঘন এবং সর্ববৃহৎ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নসহ দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত। এমডিজির লক্ষ্যসমূহ সফল বাস্তবায়নের পর এসডিজির লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পথেও বাংলাদেশ দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ‘রূপকল্প- ২০২১’ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এখন ‘রূপকল্প-২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নিয়ে কাজ করছি, এগুলোর সফল বাস্তবায়ন দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে আমরা সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।