সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ, ‘বাঁচাতে নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি

খাইরুল ইসলাম মুন্না (বেতাগী) বরগুনা. / ১৪৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২

বেতাগীতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাকরি ‘বাঁচাতে’ ওই প্রার্থী নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গত ২২ নভেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একাধিক প্রার্থী।

জানা গেছে, পদটিতে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ইউনিট/ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। গত ৪ নভেম্বর লিখিত ও ৮নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হালিম মৃধার মেয়ে মোসা. খাদিজা আক্তার ওই পদে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে আবেদন করেন। একই পদে ইউনিটের প্রকৃত বাসিন্দা মোসা. আসমা আক্তার (রোল নং-১২০২৭০৫৫১), মোসা. সুইটি আক্তার (রোল নং-১২০২৭০৫৭৮) ও মোসা. মুক্তা আক্তারসহ (রোল নং-১২০২৭০৫৮১) মোট ৬ জন পরিবার কল্যান সহকারী পদে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু গত ৯ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে খাদিজা আক্তারের রোল (১২০২৭০৫৮০) প্রকাশ করা হয়।

চাকরিপ্রার্থী মোসা. সুইটি আকতার অভিযোগ, প্রকৃত বাসিন্দা হিসেবে তাঁকে চাকরি না দিয়ে যিনি ইউনিটের বাসিন্দা নয় তাঁকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ঘোষনা করা হয়েছে। খাদিজা আক্তার ৪ নং ওয়ার্ড তথা ২/খ ইউনিটের বাসিন্দা। এখন তিনি (খাদিজা) চাকরি স্থায়ী করতে ২/ক ইউনিটে নানার জায়গায় ঘর তৈরি করছেন।
অন্য প্রার্থী মো: জাবেদ আলী খলিফার মেয়ে মোসা: আসমা আক্তার ও গাজী হাবিবুর রহমানের মেয়ে মোসা: মুক্তা আক্তার দাবি করেন, তাঁরা যোগ্য হওয়া সত্বেও তাঁদের বঞ্চিত করে অন্য ইউনিটের বাসিন্দাকে চাকরিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁরা এর প্রতিকার চান।
সরেজমিনে বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে গিয়ে খাদিজা আক্তারের স্থায়ী কোন বসত ভিটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঐ এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ি এলাকায় ধানক্ষেতের পাশে কয়েকজন মিস্ত্রিকে একটি ঘর নির্মাণ করতে দেখা যায়। ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুচ হাওলাদারের ভাষ্যমতে, চাকরির বৈধতা আদায়ের জন্য যে জায়গায় ঘর করা হচ্ছে, তা খাদিজার নানা মৃত আনোয়ার আলীর জমি। তাঁর নামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর ঘরটি তৈরি করা শুরু করেছেন তাঁরা।
মোসা. খাদিজা আক্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর মা নুরুন নাহার দাবি করেন, তাঁরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। তবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাবার বাড়িতে জমি নিয়ে ঝামেলা থাকার কারণে সেখানে এখন ঘর তৈরি করছে। খাদিজা এখন নানা বাড়িতেই থাকে।
বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর মীর জানান, খাদিজা আক্তার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সেভাবে পরিচয়পত্র ও প্রত্যয়ন নিয়েছেন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগটি ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অংশে। এই অংশের প্রার্থীরা আপত্তি তুললে খাদিজা তাঁর কাছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যয়ন নিতে এসেছিলেন। তিনি তাঁকে প্রত্যয়ন দেননি।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি নেওয়ার সূযোগ নেই। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগের পর তদন্ত করছেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সরজমিনে তদন্ত শেষে এরই মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা বরগুনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহমুদুল হক আজাদ বলেন, এ নিয়ে উৎকন্ঠার কিছু নেই। ডিসির সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নেবেন।

নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু নিয়োগ প্রদানকারী কর্মকর্তা আমি নই। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন পদক্ষেপ নেই।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর