বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০১:২০ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাটে ভেজাল কীটনাশকে কপাল পুড়লো আলু চাষিদের!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ২৭৮ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার অর্ধশত বিঘা জমির আলু ক্ষেত ভেজাল কীটনাশক স্প্রে করে মরে যাওয়ার অভিযোগ চাষিদের।

ক্ষতিপুরনসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুই গ্রামের চাষিরা দলবদ্ধ ভাবে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে পৃথক দুইটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপরও মেলেনি কোন প্রতিকার।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চাষিরা আলুসহ নানান সবজি চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করেন। বেশ কিছু কৃষক রয়েছেন বাণিজ্যিক ভাবে আলুর চাষ করেন। প্রতি বছর আলুর বাম্পার ফলনে বেশ লাভবান হচ্ছে এ অঞ্চলের চাষিরা। এ বছরও লাভের আশায় ব্যাপক হারে আলুর চাষ করেছেন তারা। আলুর চাষাবাদের সময় মত বীজ সার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আগাম আলু উঠে বাজারে গেলেও মৌসুমের আলুই ব্রীজসহ সারা বছরের জন্য রাখা হয় হিমাগারে। মৌসুমের আলু আর কিছু দিন পরে সংরক্ষন শুরু করবে এ অঞ্চলের চাষিরা। শীতের মাঝামাঝি সময় শীতের তীব্রতা ও গাছ পচা রোগ থেকে আলু গাছ রক্ষায় চাষিরা কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন।

এসব চাষিরা ফেয়ার এ্যাগ্রোকামিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলারদের পরামর্শে মেনকোজেব স্প্রে করেন। এ কীটনাশক স্প্রে করার দুই দিন পর আলু গাছের পাতা পুড়ে মরে যেতে শুরু করে। ওই কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে আবারও ওই কোম্পানীর অন্য ওষুধ স্প্রে করেন। কিন্তু কোন ভাবেই আলু ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি চাষিরা। কোম্পানীর প্রতিনিধিসহ ডিলারদের দাঁড়ে দাঁড়ে নিস্ফল ঘুরে ব্যর্থ হয়ে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বড়াবাড়ি ও বড় কমলাবাড়ি গ্রামের চাষিরা দলবদ্ধ হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করে ক্ষতিপুরনসহ ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

উপজেলা সদরের বড়াবাড়ি গ্রামের আলু চাষি আফছার উদ্দিন বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আলু লাগিয়েছি। ফেয়ার এ্যাগ্রোকামিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের ডিলার লাবনী এন্টারপ্রাইজের প্রোভাইডার কামাল হোসেনের পরামর্শে মেনকোজেব স্প্রে করি। এর পরদিন আলু গাছ পুড়ে যায়। পরে পুনরায় তারই পরামর্শে আবারও ওষুধ স্প্রে করেও ক্ষেত রক্ষা করতে পারি নি। এখন কোম্পানীর লোকজন টালবাহনা করছে। প্যাকেটের গায়ে একহাজার ৮১ টাকা কেজি মুল্য লেখা থাকলেও বিক্রি করেন মাত্র ৭৫০ টাকা। আলু মরে যাওয়ায় প্রায় লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তিনি।

তার প্রতিবেশি চাষি ছকমল হোসেন বলেন, খেয়ে না খেয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। মেনকোজেব স্প্রে করে সব মরে গেছে। গতবছর এ জমি থেকে ৮০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছি। এবারও লাখ টাকা বিক্রির স্বপ্ন পুড়ে গেলো ভেজাল ওষুধে। আমরা গরিব ও অশিক্ষিত চাষি। সরকার না জেনে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করা অনুমতি কেন দিল?। এ ওষুধ স্প্রে করে তার গ্রামের ১৫/২০ জন চাষির কয়েক বিঘা আলুর ক্ষেত মরে গেছে। এর ক্ষতিপুরন দাবি করেন তিনি।

চাষি এরশাদুল হক বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন অভিযানের নামে মোটা অংকে টাকা নিয়ে অনুমোদন দেন মানহীন এসব ভেজাল ওষুধের। এসব ওষুধ বিক্রি হলে মোটা অংকে কমিশন পান কৃষি বিভাগ, ডিলার ও কোম্পানীর লোকজন। মরে যাচ্ছে শুধু গরিব চাষিরা। তাই তো অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। কারন গরিব চাষি মরলে কি আর বাঁচলেই কি?

একই উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আলু চাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, শুধু মাত্র মেনকোজেব স্প্রে করার দুই দিন পরেই নিজের ১২ বিঘাসহ এ গ্রামের প্রায় ৪০ বিঘা জমির আলু ক্ষেত পুড়ে মরে গেছে। আমি মরা ক্ষেতের নমুনাসহ কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কৃষি বিভাগ কোন কর্ণপাতই করছেন না। কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। প্রতি বছর বাণিজ্যিক ভাবে আলু চাষাবাদ করেই চলে সংসার। এ বছর উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা বাড়ির খাবার আলুটুকুও পেলাম না। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ফেয়ার এ্যাগ্রোকেমিক্যালসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, মাঠকর্মীদের তদন্তে চাষিদের লিখিত দুই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তবে আমার কিছুই করার নেই। যে ওষুধে চাষিরা ক্ষতির কথা বলেছেন তার রেজিস্ট্রেশন ও বাজারজাতের অনুমতি রয়েছে। যার কারনে কোম্পানীর বিরুদ্ধে আমার করার কিছুই নেই। খুব বেশি প্রতিবেদন উপরে পাঠাতে পারব। চাষিরা মনে করলে কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। কিন্তু আমি সরাসরি কোন ব্যবস্থা নিতে পারব না।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর