শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৪ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে মানসিক ভারসাম্যহীন জীবন থেকে মুক্তি চায় আসাদুজ্জামান!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ২৫২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

লালমনিরহাটের মানসিক ভারসাম্যহীন জীবন থেকে মুক্তি চায় আসাদুজ্জামান। দীর্ঘদিন থেকে দিনমজুর আসাদুজ্জামান (৪৬) এর জীবন বাধাঁ শিকলে। তিনি জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন খানের বাজার এলাকার মৃত জাফর আলীর ছেলে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, শৈশব জীবনে আসাদু- জ্জামান নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় অসুস্থ ছিলেন। সে সময়ও তিনি ভারসাম্য হারিয়ে পাগলের মত আচরণ করতেন। ওই সময় অভাবের সংসারে উপার্জনকারী ছিলেন তার বাবা মৃত জাফর আলী। তিনি ছিলেন দিনমজুর। সন্তানের সুস্থতার জন্য যেটুকু সয়সম্বল ছিলো তা বিক্রি করে আসাদুজ্জামানের চিকিৎসা করেন।

উন্নত চিকিৎসা করার পর আসাদুজ্জামান সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কৈশর জীবনে এসে আসাদুজ্জামান হারান তার পিতা জাফর আলীকে। সংসারের দায়িত্বভার পরে তার বিধবা মায়ের ওপর। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চলে তাদের।
যৌবনে এসে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করে আসাদুজ্জামান। এরই মধ্যে “ছয়” কন্যা সন্তানের বাবা হন তিনি। ছয় কন্যা সন্তানসহ “নয়” সদস্যের সংসারে একমাত্র ভরসা আসাদুজ্জামান। দিনমজুরী করে পাঁচ কন্যা সন্তানের বিয়ে দেন তিনি। বয়স বারার সাথে সাথে হঠাৎ করে দেখা দেয় মানসিক ভারসাম্য। বিপাকে পড়ে যায় পরিবারটি। মানসিক ভারসাম্যহীন আসাদুজ্জামান প্রায় সময় রাস্তায় গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর, বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি করেন। এরকম অবস্থা দেখে তার স্ত্রীও চলে যায় তাকে ছেড়ে।

আবারও অন্যের কাছে হাত পেতে, প্রতিবেশিদের সাহায্য নিয়ে ছেলের জন্য চিকিৎসা করান তার বিধবা মা। কিন্তু এ যাত্রায় আর সুস্থ করা যায়নি আসাদুজ্জামানকে। বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানের পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে শুরু করেন বিধবা মা আশফা বেগম।
এভাবেই গত এক বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি আসাদুজ্জামানের জীবন। বিধবা মা আশফা বেগম একাধিকবার স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছেনা আসাদুজ্জামানের।

আসাদুজ্জামানের প্রতিবেশী ভাই জানান, আবারো মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বসতবাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু বিক্রি করে চিকিৎসা করান তার বিধবা মা। এখন আর চিকিৎসা করার মত অর্থ সম্বল কোনটাই নাই তাদের। উন্নত চিকিৎসা করলে হয়তো আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো আসাদুজ্জামান। উপায়ন্তর না পেয়ে গাছের সাথে বেধে রেখে জীবন কাটাচ্ছেন পরিবারটি।

আসাদুজ্জামানের বিধবা মা আশফা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আবারো মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর অনেক ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হয়েছি, সয়সম্বল যা ছিলো বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি, ডাক্তার উন্নত চিকিৎসা করতে বলেছে কিন্তু অর্থের অভাবে পারছিনা। মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে হাত পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, আসাদুজ্জামান মানসিক ভারসাম্যহীন। সে কারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। আসাদুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা করার আহব্বান জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর